পতিতা পর্ব-১৭ | Potita -17 লেখিকাঃ ইতি চৌধুরী

অয়ন আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

অয়ন চৌধুরী ফিরে আসতেই যেনো রেনুর সব কষ্ট দূর হয়ে যেতে লাগলো।

বাবাকে আরো দুদিন হাসপিটালে রেখে বাসায় নিয়ে এলাম। আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ তবে আগের মতো আর কথা বলতে পারে না। আগে বাবার কথা এতোটাও আটকে যেতো না এখন অনেকটাই বুঝা যায় না। তাও শান্তি বাবা ভালো আছে, সুস্থ আছে।

তবু কোনভাবে আমি মনের ভিতর থেকে ঐ ব্যাপারটাকে সড়াতে পারছি না। যদি কখনো কোন ভাবে অয়ন চৌধুরী জানতে পারে তখন কিভাবে রিয়েক্ট করবে সে। অবশ্য আমার ক্ষেত্রে তার রিয়েক্ট করার কোন কারণ নেই। আমি তো আর তার প্রেমিকা নই আর না তার সাথে কোন সম্পর্ক আছে তার সাথে আমার৷ আমি তো তার কেউ নই তাহলে সে কেনো আমাকে আটকে রাখতে চায়। আবার এসব আকাশ কুসুম ভাবছি আর তার জন্য অপেক্ষা করছি।

সকাল থেকে অয়নের কাজে মন বসছে না। বসবেই বা কিভাবে বার বার রেনুর কথাই মাথায় ঘুড়ছে। এখন তো সব কিছু ঠিক যাচ্ছে তাও রেনুর মাঝে কিছু একটা চাপা আছে যা অয়ন বুঝতে পারছে কিন্তু বলছে না। হয়ত বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। কি কথা যা রেনু বলতে নিয়েও বলছে না। সেটা না জানা অবধি অয়নের শান্তি হবে না। অয়নকে যেভাবেই হোক জানতে হবে। হঠ্যাৎ হঠ্যাৎ করেই রেনু অসহায়ের মতো তাকায় অয়েনর দিকে যেনো কোনো অপরাধবোধ রেনুকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। কোনো অনুশুচোনা। কিন্তু কেনো??? অয়ন জিজ্ঞেসও করেছিলো কিন্তু কোন লাভ হয় নি৷ রেনু বাবার কথা বলে এড়িয়ে গেছে। আর সেটা যে রেনুর এড়িয়ে যাওয়া ছিলো তাও অয়ন বুঝতে পেরেছে। এতো দিন হলো মেয়েটা অয়নের জীবনে এসেছে কখনো দুজন স্বাভাবিক ভাবে দু-দন্ড কথাও বলে নি। না অয়ন নিজের সম্পর্কে কিছু বলেছে আর না রেনুর সম্পর্কে কখনো জেনেছে৷ তবু কোনো অজানা মায়ায় বাধা পরে গেছে। রেনুর কি হয়েছে তা তো জানতেই হবে অয়নের।

তাই জানার জন্য বাসায় ফিরেই টুনিকে বলে উপরে যাওয়ার জন্য কথা বলবে।

টুনি- ডেকেছেন আমাকে???

অয়ন- বোস।

টুনি বসতে বসতেই জিজ্ঞেস করে।

টুনি- কিছু কি হয়েছে???

অয়ন- রেনুর কি হয়েছে??

টুনি- মানে???

.অয়ন- আমি তো ছিলাম না। তোকে কিছু বলেছে??? আসার পর সেদিন ওর ওভাবে আসা। ওভাবে রিয়েক্ট করা। ওর বাবা অসুস্থ সেটা ঠিক তবে জানি না কেনো আমার মনে হচ্ছে মেয়েটা কিছু লুকাচ্ছে।

টুনি- একটা কথা বলার ছিলো।

অয়ন- কি???

টুনি-সিকিউরিটি বলল সেদিন রাতে নাকি তাকে একটা গাড়ি নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো। আর…

অয়ন- আর???

টুনি- সাথে একজন পুরুষমানুষ ছিলো।

টুনির কথা শুনে অয়ন অবাক হয়ে তাকায়। টুনি বেশ বুঝতে পারছে কথাটা অয়নের জন্য বিস্ময়কর লাগছে তাই আর কিছু বলল না উঠে চলে গেলো।

টুনির কথা শুনার পর থেকে অয়ন কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছে না। রেনু কি তাহলে অন্য কারো সাথে কিন্তু অয়ন তো নিষেধ করে গিয়েছিলো। এটাও ঠিক রেনুর বাবার অবস্থা খারাপ ছিলো আর হাসপিটালেও অনেক খরচ হয়েছে তবে সব তো অয়ন সামলে নিয়ে ছিলো তাহলে কেনো রেনু এমন কিছু করল। কেনো কথা শুনল না। মূহুর্তের মাঝে অয়নের প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো। ইচ্ছে করছে সব ভেংগে ফেলতে। রাগি মানুষ গুলোর এই এক সমস্যা তাদের কথার এদিক সেদিক হলেই এরা চটে যায়। অয়ন হাতের সামনে রাখা ফ্লাওয়ার বাস টা ফেলে দেয়। দরজার পিছনে দাড়িয়ে টুনি কেঁপে উঠে। টুনি জানে এখন এমন টাই হবে তাই ইচ্ছে করেই চলে না গিয়ে দরজার পিছনেই দাড়িয়ে ছিলো। রাগে অয়ন কাউকে কল দিয়ে কথা বলতে বলতে বেড়িয়ে যায়।

সেই বিকেল থেকে শুয়ে আছি চোখে ঘুম নেই। মনের মাঝে কেমন যেনো একটা অস্থিরতা কাজ করছে। না জানি আবার কোন বিপদ অপেক্ষা করছে আমার জন্য। বিছানায় বার বার এপাশ ওপাশ করছে।

মা- কিরে ঘুমাস নি???

মার ডাকে পিছনে ফিরে উঠে বসলাম।

রেনু- না মা ঘুম আসছে না।

মা- এভাবে না ঘুমিয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবি মা।

রেনু- ঘুমানোর চেষ্টা করছি মা ঘুম আসছে না।

মা- আয় তোর মাথায় তেল দিয়ে দেই।

আমি মার সামনে বসে পরলাম। মা অনেক দিন পর আয়েশ করে আমার চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে। আমি আরামে চোখ বন্ধ করে রেখেছি।

মা- রেনু

রেনু- হু

মা- তুই কি কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত রে মা??

রেনু- হঠ্যাৎ এমন কথা বলছো কেনো মা???

মা- তোকে কয়দিন ধরে দেখছি সারাদিন কি যেনো ভাবিস। কি এতো ভাবিস আমাকে বল।

রেনু- তেমন কিছু না মা।

মা- তোর চাকরী নিয়ে কি কোন সমস্যা হয়েছে রে মা??

আমি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লাম।

মা- নতুন জয়েন করলি আর সাথে সাথে এতো গুলো টাকা লোন আর এতো দিন ছুটিও কাটালি।

রেনু- না মা ওসব নিয়ে চিন্তা করো না। অফিসে সব ঠিক আছে।

মা- ঠিক থাকলেই ভালো।

রেনু- তুমি চিন্তা করো না মা তোমার রেনু ঠিক সব সামলে নিবে দেখো।

মা আমার চুলে বিনি করে দিয়ে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে দেয়। স্কুলে থাকতে মা সব সময় এমন করতেন।

মা- উঠে মুখ হাত ধুয়ে নে আমি তোর জন্য চা করে দিচ্ছি।

ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৭ টা বাজে। ১ ঘন্টা পরেই আমাকে নিতে আসবে। তাই উঠে একে বারেই তৈরি হয়ে নিলাম।

বের হওয়ার আগের সময়টা বাবার সাথে না কাটালে আমার হয় না।

বেরিয়ে গেলাম। গলির মোড়ে পৌছানোর আগেই দূর থেকেই গাড়িটা দেখতে পারছি। আমাকে হয়ত দেখতে পেয়েছেন৷ আমাকে দেখেই গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে আসছেন সে। আমি আশেপাশে তাকাতে লাগলাম চেনা পরিচিত কেউ আছে কিনা দেখার জন্য।

রেনুকে দেখে অয়ন গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে যায়। বার বার মনে পরতেই অয়নের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। তখন টুনির থেকে ঐ কথা শুনার পর অয়ন প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলো রেনু কোথায় ছিলো জানার জন্য। আর তা জানার মাধ্যম দুই টা এক যদি রেনু নিজে বলে দেয় সেটা রেনু বলছে না। দ্বিতীয় পথ যে মাধ্যমে অয়ন রেনুকে পেয়েছে হয়ত তার সাথে কোন লিংক আছে। হয়ত কিছু জানতে পারবে অয়ন। তাই তাকে ফোন দেয়৷ আর সেই বলে সেদিন রাতে রেনু অন্য কারো কাছে গিয়েছিলো। সেটা শুনার পর থেকেই অয়নের মাথা ঠিক নেই। প্রচন্ড রাগে অয়ন কি করবে নিজেই জানে না।

সে আমার কাছাকাছি আসতেই আমার ভিতরে ধুক করে উঠল৷ হয়ত ভয়ে। সে এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছেন। তার চোখ গুলো প্রচন্ড রকমের লাল হয়ে আছে৷ রাগন্ত মানুষের মতো। মনে হয় কোন কারণে খুন অথিষ্ট। আমি কিছু বলার আগেই সে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে অনেক বেশি গতিতে গাড়ি চালাতে লাগলেন৷ যেনো তার ট্রেন ছুটে যাবে৷ কি হচ্ছে বা কেনো হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন তাকে কোন প্রশ্ন করাটাও অবান্তর হবে ভেবে চুপ করে রইলাম৷

কোন রকমে বাড়ির ভেতরে গাড়িটা রেখেই সে আবার আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এবার আমি প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছি হাতে। টুনি দেখে একবার কাছে আসতে নিয়ে দাড়িয়ে গেলো। কোন রকমে সে আমাকে টেনে বেড রুমে নিয়েই আমাকে রুমের ভিতর ছুড়ে মারলেন। আমি একপ্রকার গিয়ে ছিটকেই পরলাম। কপাল ভালো বিছানায় পরেছি না হলে খবর ছিলো আমার। এতো রেগে আছে কেনো মানুষটা৷ তার এমন রূপ তো এর আগে কখনো দেখি নি আমি। সে আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে চুলের মুঠি ধরে আমাকে তার দিকে ফেরায়। এবার আমার অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

রেনু- আহহ… লাগছে আমার।

অয়ন- তাই লাগছে??? খুব বেশি লাগছে???

আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এতো রাগ। সে রাগে থর থর করে কাঁপছে।

রেনু- কয় জনকে প্রয়োজন তোমার??? কয় জন লাগবে???

সে চিৎকার করে কথাগুলো বলছে। আমি তার হঠ্যাৎ করে এমন প্রশ্ন শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।

অয়ন- আমাকে দিয়ে তোমার হয় না???

নাকি আমি তোমার জন্য যথেষ্ট নই???

কোনটা?? বলোওও

কেনো গিয়েছিলে অন্য কারো কাছে???

কেনো???

কেনো শুনলে না আমার কথা???

আমার চোখ গুলো যেনো বড় বড় হয়ে গেলো এখনি ফেটে বেরিয়ে আসবে। আমি তার দিকে তাকিয়েই আছি। সে কিভাবে জানলো।

অয়ন- জবাব দাও You damn কেনো গিয়ে ছিলে??? কেনো শুনলে না আমার নিষেধ???

কথা বলতেও আমার গলা কাঁপছে। গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। অনেক জোর করেই গলা দিয়ে শব্দ বের করলাম।

রেনু- আপ…আ…আপনি আপনি কিভাবে জা…

অয়ন- এটা নয় আমার উত্তর দাও কেনো শুনলেন না???

আর একটু অপেক্ষা করা যেতো না আমার জন্য?? আর অল্প একটু??

এবার আমি তার দিকে তাকিয়ে কেঁদেই দিলাম।

রেনু- একটু নয় অনেকটাই অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কি করবো আমি আমার বাবাকে যে বাঁচাতে হবে। আমি আমি কোন পথ খুজে পাচ্ছিলাম না৷ পাগলের মতো ফোন দিলাম আপনাকে বার বার কল দিলাম যদি একবার রিসিভ করতেন একবার…

বলতে বলতেই আমি ফ্লোরে বসে পরলাম কাঁদতে কাঁদতে। অয়ন চৌধুরীও আমার সামনে বসে পরলেন।

অয়ন- আর একটু অপেক্ষা করতে। টুনিকে তো রেখে গিয়ে ছিলাম তোমার জন্য কেনো জানাও নি টুনিকে???

রেনু- বাবার ঐ অবস্থায় এতো টাকার প্রয়োজন আমার কিছুই মনে ছিলো না। আমি কি করব। কার কাছে যাবো। কাকে বলবো। টুনিকে যে জানাবো কিছুই মনে ছিলো না আমার। তবে তবে বিশ্বাস করেন ঐ মানুষটার সাথে সে রাতে আমার কিছুই হয় নি। আমি পারি নি। আমি ফিরে এসেছি। আমি সত্যি বলছি। বিশ্বাস করেন।

অয়ন- আমাকে ছুয়ে বলো।

আমি মাথা তুলে তার দিকে তাকাল। সে আমার হাতটা ধরলেন।

অয়ন- বলো

রেনু- আমি আপনাকে ছুয়ে বললে আপনি বিশ্বাস করবেন???

অয়ন- শুধু ছুয়ে না তুমি এমনিতে বললেও আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। একবার বলো আমি ছাড়া অন্য কারো স্পর্শ রেনুর মাঝে নেই৷

তার কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

অয়ন- শুধু একবার বলো।

আমি তার চোখে চোখ রেখে তার হাত ধরে বললাম।

রেনু- রেনুকে আপনি ছাড়া কেউ স্পর্শ করে নি।

তারপর সেদিন ঘটে যাওয়া সব কিছুই বললাম তাকে। ডঃ আঙ্কেলের কথা। তারপর উপায় না পেয়ে অন্য কারো কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া। কিভাবে আবিদ সাহেবের সাথে দেখা হয়। তার অবিশ্বাস করা যে আমি এই লাইনের মেয়ে। তার আমাকে দিয়ে যাওয়া সব কিছুই বললাম।

তারপর অনেক্ষণ দুজন চুপ করে রইলাম। সেখানেই বসে ছিলাম। উঠলে দাড়ালাম সে পিছন থেকে ডাক দিলো।

অয়ন- কেনো এভাবে শেষ করে দিচ্ছো নিজেকে????

আমি পিছনে ঘুড়ে তাকালাম।

রেনু- শুনবেন রেনুর গল্প???

অয়ন- শুনবো সব জানতে চাই।

রেনু- তাহলে শুনুন। আমার বাবা জনাব রিজভী রহমান মা ফাতেমা সালাউদ্দিন। দুজন অসম্ভব সুখি মানুষ আর তাদের সুখের দুনিয়া তাদের তিন কন্যা। রেহনুম রহমান, অনামিকা রহমান ও তানহা রহমান যাদের কে বাবা শখ করে রেনু, অনু ও তনু বলে ডাকে। আর সেই রেহনুম রহমান আমি যাকে আপনি রেনু হিসেবে জানেন। আমার বাবার দেয়া শখের নাম রেনু। শুধু আপনি না আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি, স্কুল, কলেজ এমনকি ভার্সিটি লাইফেও সবাই আমাকে রেনু নামেই চিনতো। হুট করে কাউকে রেহনুম বললে অনেকেই চিনতো না। ছোট বেলা থেকেই বাবা মায়ের অনেক বেশি আদরে বড় হয়েছি। সব বাবা মাই তার সন্তাদের অনেক আদর করে তবে আমার বাবা আমাদের অনেক বেশি আদর করতেন বিশেষ করে আমাকে৷ আমার বাবার জন্য আমরা তিন বোন আল্লাহ প্রদত্ত তিনটে রহমত ছিলাম। আল্লাহ নাকি আমার বাবার উপর অনেক খুশি হয়েছেন তাই তাকে প্রথম সন্তান হিসেবে আমাকে তার কন্যা সন্তান হিসেবে পাঠিয়েছেন আর আল্লাহ আরো সন্তুষ্ট হয়ে তাকে তিন কন্যার পিতা করেছেন। আমাদের তিন বোনের প্রতি বাবার ভালোবাসার কোন কমতি ছিলো না। তার কোন ছেলে নেই এটা নিয়ে বাবার কখনো কোনো আক্ষেপ ছিলো না। বাবা সব সময় বলতেন আমার মেয়েরাই আমার ছেলে। আমাকে নিয়ে খুব গর্ভ করতেন বাবা। আমি ছোট বেলা থেকেই বাবা মার সম্পূর্ণ বাধ্য ছিলাম। পড়া লেখায় ভালো ছিলাম। তাই যখন যেটাই আবদার করেছি বাবা সেটাই পূর্ণ করেছেন। আমার বাবা অনেক বেশি বড়লোক বা আমি অনেক ধনি বাবার সন্তান তা নয়। বাবার নিজের ব্যবসা ছিলো৷ অনেক বড় নয় তবে যা ছিলো ভালোই ছিলো৷ আমরা সুখে ছিলাম। আমার বাবার কোন ভাই ছিলো না তবে তার চাচাতো ভাই ছিলেন মাহমুদ রহমান। মাহমুদ চাচাকে বাবা নিজের ভাইয়ের মতোই দেখতেন। পড়ালেখা শেষ করে যখন চাচা কোন চাকরী পাচ্ছিলেন না তখন বাবাই চাচাকে নিজের সাথে রেখে দেয়। ব্যবসার নানা কাজে একজন বিশ্বস্ত মানুষ পাওয়া এখনকার দিনে অনেক বিড়ল৷ তবে আমার বাবা সহজেই মানুষকে আপন করে নিতেন আবার বিশ্বাসও করতেন। যেমন মাহমুদ চাচাকে বিশ্বাস করতেন। আমি তখন অনেকটা ছোটই যখন থেকে চাচা বাবার সাথে কাজ করেন। বাবা অনেক করেছেন তার জন্য, তাদের জন্য। চাচাকে বিয়ে দেয়া, সেটেল করা সবি আমার বাবা করেছেন। তারাও অনেক সম্মান করতেন ভালোবাসতেন। আমার বাবা মানুষটা অনেক সহজ সরল ছিলেন। অনেক বিশ্বাস করতেন বাবা চাচাকে। তাই তার কাছে কখনো কোন হিসেব চাইতেন না৷ তারপর একদিন হুট করেই বাবার অনেক বড় একটা লস হয়ে যায়। বাবাকে ভূর্তুকি হিসেবে অনেক টাকা দিতে হয়েছিলো। সেইদিন থেকে শুরু হয়ে যায় বাবার ব্যবসার লস আর আমাদের জীবনের অধোপতন। তবু বাবাকে কখনো চিন্তা করতে দেখিনি৷ এতো কিছু হচ্ছিলো কিন্তু বাবা আমাদের কখনো বুঝতে দেয় নি। ব্যবসায় একের পর এক লস শুরু হয়। ব্যাংকে রাখা টাকা গুলো শেষ হতে থাকে। বাবা যখন চাচার কাছে হিসেব চাইলেন তখন চাচাও তার রূপ বদলে নেয়। বাবার বুঝতে বাকি থাকে না ঘটনা কি ঘটেছে তাও বাবা কিছু বলেন নি। বাবা আশুলিয়াতে আমাদের তিন বোনের নামে জমি কিনেছিলেন। তার খুব শখ ছিলো সেখানে বাড়ি তুলবে আমাদের নামে। বাড়ির নাম হবে তিনকন্যা নিবাশ। শেষে কোন উপায় না পেয়ে বাবাকে সেই জমি বিক্রি করতে হয়। সেদিন জীবনে প্রথম আমি আমার বাবাকে কাঁদতে দেখেছি।

.

#চলবে…….

Related Posts

Leave a Reply

Direct link ads