পতিতা পর্ব-১৫ | Potita -15 লেখিকাঃ ইতি চৌধুরী

অয়ন আবার কল দেয় কিন্তু ফোন টা বন্ধ।

আবার ফোন দেয় অয়ন। কয়েকবার ফোন দেয়। কিন্তু বার বার একি কথা।

“আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এখন বন্ধ আছে।”

অয়ন রাগে ফোন টা মাটিতে ছুড়ে মারে। কেনো সময় মতো কিছু মাথায় আসে না। এতোক্ষণ কেনো রেনুকে ফোন দেয় নেই তাই নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হতে থাকে অয়নের। অয়নেরই বা কি দোষ। কথায় আছে না চোর গেলে বুদ্ধি বাড়ে। রেনুর জন্য অতিরিক্ত চিন্তায় অয়নের একবারো মনে হয় নি ফোন টা আগেই দেয়া উচিত ছিলো। উল্টো ভাবছিলো বাসায় পৌছেই হয়ত রেনুকে দেখতে পাবে। কিন্তু এখন কোথায় খুজবে রেনুকে। অনেকটা সময় অপেক্ষা করে অয়ন রেনুর বাসার ওখানে চলে যায়। যেখানে রেনু গাড়ি থেকে নামে। বাসা তো চিনে না। নাহলে বাসায় চলে যেতো।

আমাকে দেয়া ঠিকানা মতো পৌছে গেলাম। লিখা ছিলো লিফটে উঠে ৯। ফ্ল্যাট নাম্বার I 3. লিফট দিয়ে উপরে চলে এলাম। ফ্ল্যাটের সামনে দাড়িয়ে আছি। কেনো যেনো বেল চাপতেও পারছি না। হাত ঠান্ডা হয়ে আসছে। প্রায় ১০ মিনিট দাড়িয়ে রইলাম। একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বেল চাপতে যাবো তখনি কেউ দরজা খুলে দিলো।

– কাউকে চাই???

রেনু- আপনি রায়হানুল আবিদ???

– হ্যাঁ বাট আপনি???

রেনু- আমার সাথে আপনার ফোনে কথা হয়ে ছিলো। আমি রেনু।

আবিদ- আপনি রেনু???

তার কথা শুনে আর তাকানো দেখে মনে হয় তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে আমি রেনু। হয়ত অবাক হয়েছেন আমাকে দেখে বা অন্য কাউকে আশা করছিলেন।

আবিদ- Are you sure???

রেনু- Yes…

আবিদ- ওকে। আপনার ফোন বন্ধ। আমি ফোন দিচ্ছিলাম।

রেনু- চার্জ শেষ তাই।

আবিদ- ওহহ সরি আপনাকে এভাবে দাড় করিয়ে রেখেছি। ভেতরে আসুন।

আমি ভেতরে ডুকতেই আবিদ সাহেবের একটা কল আসে।

আবিদ- হ্যালো রাফি। চলে এসেছিস??? না না ওয়েট কর আমি আসছি। বললাম না ওয়েট কর।

সে ফোনে কথা বলা শেষ করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে।

আবিদ- ঐটা আমার বেড রুম। আপনি চাইলে ফ্রেস হতে পারেন। বা রেস্ট নিতে পারেন। আর লেফট সাইডে কিচেন খুদা লাগলে ফ্রিজে খাবার আছে যেটা ইচ্ছা কোনো সংকোচ ছাড়া খেয়ে নিতে পারেন৷ অথবা যদি কিছু তৈরি করে খেতে চান তাও করতে পারেন। আমি একটু বাহিরে যাবো আমার একটু সময় লাগবে চলে আসবো। আর আমি ডোর লক করে যাচ্ছি সো you are safe in here.

বলেই বেরিয়ে গেলো। আমি হাসতে লাগলাম। আমি নাকি এখানে সেফ। নিজেকে শেষ করতে এসেছি সেফ থাকলেই কি বা না থাকলেই কি। লোকটা মনে হয় একাই থাকে। দেখে মনে হলো ভদ্র মানুষ। সমাজের প্রতিটা ভদ্র মানুষই কি এমন হয়??? ভদ্রতার মুখোশ পরা?? অয়ন চৌধুরীর গল্পটা না হয় ভিন্ন তাও অনেক কিছু জানার বাকি ছিলো তার কাছে যা হয়ত আর জানা হবে না। কারণ আজ রাতের পর তার সামনে গিয়ে আর দাড়াতে পারবো না। তবে রায়হানুল আবিদ এই মানুষকে দেখলে কেউ হয়ত বলবেই না তার রাত কাটাতে আমার মতো বাজে মেয়ের প্রয়োজন হয়। এটাকেই তো মুখোশ বলে। যারা দিনের আলোয় আমার মতো মেয়েদের নামে থুতু ছিটায় আবার সেই তারাই রাত কাটাতে আমাদের মতো মেয়েদের কাছেই আসে। তবে তার মতো মানুষের তো প্রেমিকার অভাব হওয়ার কথা নয় তাহলে সে কেনো আমার মতো কাউকে ডাকলো। কি জানি হয়ত তারো কোন গল্প আছে।

আমি ভিতরে চলে এলাম। মানুষের মন ভালো না থাকলে হয়ত নিজেকে বেশি ক্লান্ত লাগে তাই হয়ত আমারো লাগছে। হেলান দিয়ে বসলাম। চোখ বন্ধ করতেই দেখতে পেলাম অয়ন চৌধুরী বলছে ” তুমি অন্য কারো কাছে যাবে না” আমি চোখ খুলে ফেললাম। উঠে বসে পরলাম। চোখ টাও বন্ধ করতে পারি না। মানুষটা কেনো বার বার আমাকে এভাবে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে?? কেনো তার কথা গুলো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়?? এতো গুলো কল দিলাম একটা বার রিসিভ করা প্রয়োজন মনে করলো না। একবারো ভাবলো না হয়ত তাকে আমার খুব প্রয়োজন। টুনি কি বলে নি আমি যাচ্ছি না। টুনির কথা ভাবতেই মনে পরলো। আমি তো টুনি কেও কিছু জানাই নি। সে তো টুনিকে বলে গিয়ে ছিলো আমাকে দেখে রাখতে। আর আমি তো টুনি কেও কিছু জানাই নি। যেখানে মানুষ গুলো আমাকে আপন করে নিচ্ছে আমি কেনো তাদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। একটা ভয় কাজ করতে লাগলো আমার মাঝে। এ পথে আবার এসে কোন ভুল করলাম না তো আমি। কিন্তু বাবা। বাবাকে কিভাবে বাঁচাবো। নাহ কিছুই মাথায় আসছে না।

অনেক্ষণ গলির মোড়ে দাড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করলো অয়ন রেনুর জন্য কিন্তু নাহ রেনুর আসার কোন খবর নেই৷ অয়ন পারছে না এক জায়গায় দাড়িয়ে থাকতে আবার পারছে না এখান থেকে সরে যেতে। তাও সেই গলিটা এমন কি আশেপাশের গলি গুলোও অয়ন কয়েকবার ঘুড়ে দেখলো। ঘুড়ে ফিরে একি জায়গায় সেই গলির মোড়ে এসে দাড়ায় অয়ন রেনুর জন্য।

প্রায় ঘন্টা দেড় এক পর আবিদ সাহেব ফিরে এলেন।

আবিদ- সরি অনেকটা লেট করে ফেললাম।

আমি কিছুই বললাম না। তবে মানুষ টা কিভাবে যেনো দেখছে আমাকে। হয়ত কিছু জানতে বা জিজ্ঞেস করতে চায়।

আবিদ- আমি আসছি দু মিনিট।

দু মিনিট বলেই ঠিকি দু মিনিট এর মাঝে হাতে দু কাপ কফি নিয়ে চলে এলেন। আমি শুধু অবাক না অনেক বেশি অবাক হচ্ছি। কারণ আমার মতো মেয়েদের প্রতি কারো এতোটা আপ্পায়ন ভাবা যায় না। ব্যাপার গুলো আমার ঠিক মাথায় ধরছে না। আসলেই কি সবার সাথে এমন হয় নাকি শুধু আমার সাথেই। কিন্তু কেনো??

আবিদ- কফি ঠান্ডা হচ্ছে।

রেনু- হ্যাঁ, জ্বি।

আবিদ- একটা প্রশ্ন করি??? যদিও আমার প্রশ্ন করার কথা নয়। তাও আমি প্রশ্ন টা করতে চাই।

রেনু- হুম বলুন।

আবিদ- আজকে কি আপনার প্রথম??? I mean….

আমি বুঝতে পেরেছি সে কি জানতে চায়।

রেনু- নাহ প্রথম নয়।

আবিদ- Are you sure??? জানি না কেনো আমার মনে হচ্ছে না আপনি এই লাইনের কেউ।

আমি তার প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।

আবিদ- না মানে আপনাকে দেখে মনে হয় আপনি ভালো ফ্যামিলির মেয়ে। তাহলে আপনি কেনো???

আমি একটা হাসি দিয়ে তার দিকে তাকালাম।

রেনু- এটাই আমার বাস্তবতা।

আবিদ- আপনি কি জানেন আজকে এখানে আরো কিছু মানুষের আসার কথা ছিলো।

আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালাম।

আবিদ- জানি না কেনো আপনাকে দেখার পর আর মন সায় দিলো না। তাই পার্টিটা ক্যান্সেল করে দিলাম।

আমি আর কিছুই বলতে পারছি না। আমার আশে পাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো কি শুধু আমার সাথেই ঘটে। কখনো তো শুনি নি আমাদের মতো মেয়েদের সাথে কেউ ভালো আচরণ করে। তাহলে আমার সাথে কি হচ্ছে?? আর কেনোই না হচ্ছে??

আবিদ- আপনি কি সিওর আপনি আজ থাকবেন?? না মানে আপনি চলে যেতে চাইলে আমি বাধা দিবো না। যেতে পারেন।

রেনু- এটা আমার প্রয়োজন।

আবিদ সাহেব একটু একটু করে আমার কাছে আসতে নিলেন। আমার কাছাকাছি এসে আমার একটা হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে একদম নিজের সাথে জড়িয়ে নিলেন।

অয়ন অনেক অপেক্ষা করল অনেক কল দিলো কিন্তু না কোন ভাবেই রেনুকে খুজে পেলো না। এমন কি যে মাধ্যমে রেনুকে পাওয়া বা রেনুর খবর পাওয়া যেতে পারে সে মাধ্যমেও রেনুর কোন খবর পেলো না। বাধ্য হয়েই মাঝ রাতে বাসায় ফিরতে হলো অয়নকে রেনুকে ছাড়াই। অয়নের মনে মনে ভয় হতে লাগলো আর কি কখনোই রেনুকে পাবে না অয়ন?? রেনুকে কি আজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলল অয়ন???

অয়ন বেল বাজাতেই দরজা খুলার সাথে সাথে অয়ন কিছু বুঝার আগেই কেউ জড়িয়ে ধরলো তাকে।

অয়ন- রেনুউউউ

রেনু অয়নকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।

অয়নের নিজেরও চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে গেলো।

.

চলবে…….

Related Posts

Leave a Comment

Direct link ads