পতিতা পর্ব-১৯ | Potita -19 লেখিকাঃ ইতি চৌধুরী

মা- রেনু দেখ তোর বাবা কেমন করছে। কিছু কর রেনু কিছু কর।

আমি যেনো বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ছিলাম। পাথর হয়ে গিয়েছিলাম আমি। এই মাঝ রাতে কি করবো?? কোথায় যাবো??? কার সাহায্য চাইবো?? মা চিৎকার করেই যাচ্ছে। অনুটা দৌড়ে সানোয়ারা আন্টিদের ফ্ল্যাটে চোলে যায়। এতো রাতে বেল দেয়ায় তামিমের বাবা ইকবাল আঙ্কেল গেট খুললেন।

ইকবাল- কি হয়েছে অনু মা তুমি এতো রাতে।

কান্নার জন্য অনু কথাও বলতে পারছিলো না।

অনু- আঙ্কেল বা..বাবা

ইকবাল আঙ্কেল- কি হয়েছে চলো তো দেখি৷

ততোক্ষণে আঙ্কেল চিৎকার চেচাঁমেচির শব্দ পেয়ে যায় তাই বুঝতে পারে কিছু হয়েছে। এসে দেখেন বাবার অবস্থা খারাপ। জ্ঞান নেই৷ নিথর হয়ে পরে আছে।

ইকবাল আঙ্কেল- ভাবি এখনি হসপিটালে নিতে হবে।

আমাদের কোন গাড়ি ছিলো না। সেভাবে কখনো গাড়ির প্রয়োজন পরে নি৷ বাবা বলতেন সবার যদি গাড়ি থাকে তাহলে অসহায় মানুষগুলো যারা রিকশা চালিয়ে নিজেদের অন্ন উপার্যন করে তারা কিভাবে বাঁচবে। তবু বাড়িটা করেই একে বারে গাড়ি কিনবে এমনটাই বাবার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু মানুষের জন্য আল্লাহ কখন যে কি রেখেছেন তা আল্লাহই ভালো জানেন। তাই ইকবাল আঙ্কেল নিজের গাড়িতে করেই বাবাকে হসপিটালে নিয়ে যান। ডঃ রহমান বাবার বন্ধু৷ তারা একসাথে স্কুল কলেজে পড়া লেখা করেছেন। তারপর আঙ্কেল মেডিকেলে ভর্তি হয়ে গেলেন আর বাবা সরকারি থেকে পড়া শেষ করলেন। বাবা ছোট বেলা থেকেই ব্যবসায়িক মাইন্ডেড ছিলেন। ব্যবসা ব্যাপারটা খুব ভালো বুঝতেন বাবা৷ তাই আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন পড়াটা শেষ করেই নিজের ব্যবসা করবেন। আর তেমনটাই করেছিলেন। এই সব কিছুই বাবার থেকে শুনা। বলতে গেলে আমাদের পারিবারিক ডঃ রহমান আঙ্কেল। আর বাবার তো কিছুদিন পর পর আঙ্কেলকে না দেখলে ভালোই লাগতো না। আঙ্কেলেরও একি অবস্থা ছিলো। আঙ্কেল হসপিটালে ছিলেন না। গাড়িতে উঠতেই মনে হয় আঙ্কেলকে একটা কল দেয়া দরকার। ভাগ্যিস কলটা দিয়েছিলাম। আমার ফোন পেেয় আঙ্কেল বাসায় ছিলেন উনিও হসিপটালে চলে আসেন।

ডঃ রহমান- ভাবি একদম চিন্তা করবেন না। আমি দেখছি। আল্লাহকে ডাকেন।

বাবাকে আইসিইউ তে নিয়ে যাওয়া হয়। আঙ্কেল অনেক্ষণ পর বেরিয়ে আসেন। আঙ্কেলর মুখটাও মলিন হয়ে গেছে।

মা- ভাই সে ঠিক আছে তো???

আঙ্কেল কিছু বলতে পারছেন না। আমাদের তিন বোনকে দেখছেন বার বার। তাই আমি আবার প্রশ্ন করি।

রেনু- আঙ্কেল বলেন না বাবা ঠিক আছে তো???

ডঃ রহমান- তোমার বাবার স্টোক করেছে।

রেনু- কিহহহ

ডঃ রহমান- আর ওর বাম পাশটা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে গেছে।

অনু- মাআআআআআ..

অনুর চিৎকারে পিছনে তাকিয়ে দেখি বাবার কথা শুনে মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। বাবা স্টোক করেছেন প্রথম বার। আমার দুনিয়াটাই যেনো অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। আমার সুখি পরিবারটা একজন আপন মানুষের বৈঈমানির জন্য আজ কেমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে৷

মার জ্ঞান ফিরার পর থেকে মার কান্না যেনো আরো বহুগুণ বেড়ে গেলো। এখন কে দেখবে আমাদের। আপন বলতে তো কেউ নেই। আত্মীয়-স্বজন যারা আছে আমরা না খেয়ে থাকলেও তারা যে সেভাবে জিজ্ঞেসও করবে না তা আমরা ভালোভাবেই জানি। অনেকের জন্যই আমার বাবা অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু তাদের বিপদ কেটে গেলে তারা আর আমাদের খবর রাখতেন না। সে সব কিছু আমাদের জানা।

ডঃ আঙ্কেলের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছিলাম বাবা নাকি কয়দিন আগে গিয়েছিলো তার নাকি কেমন অসুস্থ অনুভব হয়। আঙ্কেল কিছু টেস্ট করতে বলেছিলেন কিন্তু বাবা করান নি। এমন কি আমাদেরকেও কিছু বলে নি৷ বাসায় এমন অবস্থা চলছিলো তাই নিজের দিকে খেয়াল রাখে নি আমার বাবা টা। শুধু আমাদের কথাই ভেবেছেন। আগেই বলেছিলাম আমার বাবাটা চাপা স্বভাবের কখনো নিজের হাজার কষ্ট হলেও হাসি মুখে থাকতেন কখনো কাউকে বলতে না। এমনকি বুঝতেও দিতেন না। আর আমরাও বুঝতে পারি নি৷

মা বাবার স্টোকের কথা শুনার পর থেকে নিজেকেই দোষারোপ করে যাচ্ছেন। মা বাবার এতো কাছে থেকেও কেনো বুঝতে পারেন নি। কেনো বাবার কষ্ট হচ্ছিলো তাও বুঝে নি মা। মাকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলাম না।

প্রাইভেট হসপিটাল। বাবার ট্রিটমেন্ট এর এতো খরচ কিভাবে কি হবে। মা পরের দিন সকালে গিয়েই ব্যাংকে রাখা টাকা গুলো তুলে আনলেন। তখন ঐ টাকা ছাড়া আমাদের কাছে অন্যকোন উপায়ও ছিলো না। তিন দিন ছিলাম বাবাকে নিয়ে হসপিটালে। অনেক টাকা বিল এসেছিলো। এখনো সব আমার চোখে স্পষ্ট দেখতে পাই আমি৷ অনু যখন ক্লাস ৭ এ পড়ে একদিন স্কুলেই হুট করে ওর পেইন উঠে স্কুল থেকে ফোন দিলে বাবা ডঃ রহমান আঙ্কেলের ঠিকানা দিয়ে দেয় সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য৷ বাবাও চলে যায়। আমাদেরকেও খবর দেয় মাকে নিয়ে আমিও পৌছে যাই৷ হসপিটালে গিয়ে জানতে পারি৷ এ্যাপিন্ডিসাইড এর ব্যাথা তখনি অপারেশন করাতে হবে। অপারেশন পরপরই আমরা অনুকে বাসায় নিয়ে আসি। হাসপিটালে রাখার প্রয়োজন হয় নি৷ মাত্র কয়টা ঘন্টায় অনেক গুলো টাকা খরচ হয়েছিলো। অথচ আমার বাবা টাকা নিয়ে কোন চিন্তাই করে নি তখন। আর আমার সেই বাবার ট্রিটমেন্ট এর টাকা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হয়েছে। তবু ভাগ্য ভালো বাবা মার নামে টাকাটা রেখেছিলেন যেনো কোন বিপদ বা প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারি৷ ঐ টাকা দিয়ে হসিপটালের বিল বাবার ঔষধ সব কিছুই হয়ে গিয়েছিলো এমনকি মার হাতে আরো কিছু টাকা ছিলো। তৃতীয় দিন মা বাবার পাশেই বসে ছিলেন আমি মাকে ইশারায় বাহিরে ডাকলাম।

মা- কিরে কিছু বলবি???

রেনু- মা আমরা ঐ বাসায় আর ফিরে যাবো না।

মা- তাহলে কোথায় যাবো??

রেনু- এমনি তেও দু দিন পর আমাদের ঐ বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে৷ বাবার এই অবস্থায় বাবাকে এতো টানাটানি করাটা বাবার জন্য ঠিক হবে না মা। শারীরিক অবস্থাটা তাও আমরা দেখতে পাই কিন্তু বাবার মানসিক অবস্থার কথা ভেবেছো একবার৷ বাবার মানসিক কষ্ট গুলোর জন্যই বাবার আজ এই অবস্থা মা। আমরা বুঝতেও পারি নি। আমি আর বাবাকে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে চাই না মা। আর আঙ্কেলও বলে দিয়েছেন বাবা যেনো কোন প্রকার চিন্তা না করেন।

মা- দেখ তাহলে তুই যা ভালো মনে করিস তাই কর।

রেনু- আর শুনো কোন বড় বাসা নিবো না। যত কমের মাঝে নেয়া যায়।

মা- তাহলে আমাদের এতো জিনিস-পত্র এগুলোর কি হবে???

রেনু- এতো কিছু দিয়ে কি করব মা??? যা যা একান্তই প্রয়োজন ঐ সব জিনিস রেখে বাকি সব বিক্রি করে দিবো। এতো কিছুর প্রয়োজন নেই।

মা- বিক্রি করে দিবি???

রেনু- কি করবো মা বলো। ঐ জিনিস গুলো রাখার জন্য তো এতো বড় বাসা নেয়া সম্ভব না মা। এতো ভাড়া কিভাবে দিবো???

মা- ঠিক আছে তাহলে যা ভালো মনে করিস কর।

আমি জানতাম আমার কথা শুনে মার কষ্ট হচ্ছিলো। বাবা মার তিলে তিলে গড়া ছিলো সব কিছু। আমাদের বাসাটা, আমাদের সংসার টা বাবা মায়ের জন্য শুধু বাসা বা সংসার ছিলো না। তাদের জন্য তাদের সুখের রাজ্য ছিলো। যা তারা একটু একটু করে গড়ে তুলেছিলেন। আর সেই রাজ্যটাই নিমিষে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো আর চাইলেও তারা কিছুই করতে পারছিলেন না।

মা, অনু আর তনুকে হসপিটালে রেখে আমি বেরিয়ে পরলাম। আজকের দিনের মাঝেই বাসা খুজতে হবে। সেই সকাল থেকে খালি পেটে হেটেই যাচ্ছি৷ বাসাগুলোর এতো ভাড়া আগে জানতাম না। আমাদের তো কখনো ভাড়া দেয়া লাগে নি তাই জানতাম না। দুই বেড রুমের বাসা গুলোর ভাড়া ১৮ হাজার টার উপরে পড়ে যায়। আর ঐ সময় প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা গুণা অনেক কষ্ট সাধ্য হয়ে যাবে আমাদের জন্য। কোন ভাবেই কোন বাসা মিলাতে পারছিলাম না। তখন মনে পরলো আমার বন্ধ সাকিবের কথা। ও একাই থাকে দু দিন পর পরই বাসা পাল্টায়। ওর কাছে ধারণা আছে কোথায় বাসা ভাড়া কম হতে পারে। আমি কলের পর কল দিয়েই যাচ্ছি ছেলেটা কল রিসিভ করছে না।

সাকিব- হ্যালো

রেনু- এখনো তোর সকাল হয় নি???

সাকিব- কি করবো বল সারারাত জেগে পড়েছি তাই সকালে চোখ খুলতে পারি নি৷ তুই হঠ্যাৎ কি মনে করে।

রেনু- তোর হেল্প লাগবে একটু বের হতে পারবি???

সাকিব- কিছু কি হয়েছে???

রেনু- তুই আয় আমি বলছি।

সাকিব আর কথা না বাড়িয়ে সাথে সাথে আমার কথা মতো চলে আসে। দুজন একটা টং দোকানে বসলাম। সাকিব দু কাপ চা নিলো। ও আমাকে দেখার সাথে সাথে বুঝে গেছে কিছু একটা হয়েছে। তমার পরে যদি আমার কোন ভালো বন্ধ থাকে তাহলে সেটা সাকিব। কলেজ থেকেই আমরা একসাথে পড়ছি।

সাকিব- কি হয়েছে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো???

রেনু- বাবা স্টোক করেছেন হসপিটালে আছেন।

আমার কথা শুনে গরম চা লেগে সাকিবের জিহ্বা পুড়ে গেলো।

সাকিব- কি বলছিস??

রেনু- হ্যাঁ, আমাদের ফ্ল্যাট টা বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। আমাকে আজকের মধ্যেই বাসা নিতে হবে। কাল বাবাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দিয়ে দিবে। তাই আজকেই সব ব্যবস্থা করতে হবে।

সাকিব- দাড়া থাম তুই। কি বলছিস কিছুই মাথায় ডুকছে না আমার। সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কি সব আবোল-তাবোল বলছিস।

আমি সাকিবকে সব খুলে বললাম। শুরু থেকে কি হয়েছে কিভাবে হয়েছে। সাকিব তো আমার কথা শুনে পারছে না এখনি চলে যায় আমার চাচাকে খুন করতে। আমার বন্ধ-বান্ধবী গুলোর জন্য আমি ওদের কলিজা ছিলাম। আর আমার বাবা মাকেও অনেক ভালোবাসতো। ছেলেদের সাথে বন্ধুত্বে আমার বাবার কখনোই কোন নিষেধাজ্ঞা ছিলো না। উল্টো বাবাও ওদের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করতেন। বাবা মা জানতেন সাকিব এখানে একাই থাকে। তাই কলেজে থাকতে আমাদের ইন্টার মিডিয়েট পরীক্ষার সময় মা খুব আফসোস করলেন বললেন পরীক্ষার সময় টা ছেলে-মেয়েদের ভালো যত্ন নিতে হয়। আর ছেলেটা একা। মার আফসোস দেখে বাবা সাকিবকে ফোন করে বলছিলেন পরীক্ষার কয় মাস ও আমাদের সাথেই থাকবে ব্যগ-পত্র গুছিয়ে চলে আসতে বললেন। সাকিবে প্রথমে আপত্তি করলেও জানতো বাবা যেহুত বলে দিয়েছে সে আর কারো কথা শুনবে না। তাই বাধ্য হয়েই সাকিবকে আমাদের বাসায় উঠতে হলো। পরীক্ষায় সময় মা আমার যতোটা যত্ন করেছিলেন ঠিক ততোটাই সাকিবেরও যত্ন করেছিলো। ওকে বুঝতেই দেয় নি যে ও ওর কোন বন্ধুর বাসায় আছে। সেজন্য সাকিবও অন্য সবার থেকে একটু না অনেকটা বেশি ভালোবাসে আমার বাবা মাকে।

সাকিবে বুঝিয়ে বললাম এখন রাগ বা গরম হয়ে লাভ নেই। আমি এদিকটা সামলাতে হবে আর সেজন্য এই মূহুর্তে আমার বাসা নেয়াটা বেশি জরুরী। তারপর আমি আর সাকিব মিলে হন্য হয়ে বাসা খুজার অভিযানে নেমে পরলাম। মোহাম্মদপুর এর ওলিতে গলিতে বাসা খুজতে লাগলাম।

সাকিব- দোস্ত এদিকে বাসা ভাড়া বেশি হবে এর চাইতে এক কাজ করি চল। বাশবাড়ী চলে যাই ঐ দিকে বাসা ভাড়া কম হবে।

রেনু- ঠিক আছে চল।

তবে সেখানেও একি অবস্থা সামান্য কিছু এদিক সেদিক হয় তেমন আহামরি কম ভাড়া নয়। অগত্যা বাসা না পেয়ে অন্য দিকে যাওয়ার কথা ভেবে সামনে হাটা দিতেই সামনে আরেকটা টুলেট দেখতে পেলাম। টুলেট টা দেখে সাকিব আমার দিকে তাকালো৷ আমি বাড়িটার দিকে তাকালাম।

রেনু- সেই একি হবে দোস্ত এই বাসা দেখা না দেখা একি।

সাকিব- তাও দোস্ত এটাই শেষ। এটা না হলে এই এলাকায় আর কোন বাসা দেখবো না। এরপর নামায় চলে যাবো৷ সেখানে বাসা ভাড়া কম পাবো সিওর থাক। তবে এটা দেখি প্লিজ।

রেনু- ঠিক আছে বলছিস যেহুত আর এতো গুলো বাসা দেখেছি এই একটা দেখলে কিই বা হবে।

আমরা উপরে উঠে গেলাম। গিয়ে জানতে পারলাম পাঁচ তলার পরে ছাদে দুটো রুম আছে ঐ রুম দুটোই ভাড়া দিবে। কথাটা শুনে সাকিব আমার দিকে তাকালো।

রেনু- একবার দেখি চল।

অর্ধেক জায়গা নিয়ে করা মোটামোটি আকারের দুটো রুম সাথে সামনেই ছোট্ট করে ড্রইং রুমরে মতো ঠিক ড্রইং রুম বলা যায় না শুধু অল্প একটু বাড়তি জায়গা যোগ করা। তবে সমস্যা হলো কিচেন ও বাথরুম একটাও সাথে নয়। বাসায় ডুকার দরজার বাম পাশেই কিচেন আর কিচেনের পিছন দিকেই ছোট্ট একটা স্টোরের মতো আছে। ছাদের অন্য পাশে কোনায় বাথরুম। সব কিছু দেখে সাকিব আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই বলছে না। আমিই ভাড়ার কথা জিজ্ঞেস করলাম এসেছি যখন সব জানতে দোষ কোথায়। ভাড়াটা খুবি কম ৮ হাজার টাকা মাত্র। ঐ সময় ৮ হাজার টাকাও আমার জন্য কম ছিলো না তবে অন্য সবের তুলনায় অনেক কমই ছিলো। এতো কমে পাবো ভাবতেও পারি নি। আমি দুই ঘন্টা সময় নিলাম একটু ভেবে দেখার জন্য। দুই ঘন্টার মাঝেই জানিয়ে দিবো। সাকিবকে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।

সাকিব- সময় নেয়ার কি দরকার ছিলো। এই বাসায় কিভাবে থাকবি??? চল নামার দিকে যাই।

রেনু- ঐ দিকে গেলে দূর হয়ে যাবে রে। এখান থেকে অনুর কলেজ তনুর স্কুল সবই মোটামোটি কাছে হয়। আর নামায় গেলে অনেক বেশি দূর হয়ে যাবে।

সাকিব- তুই কি এই বাসায় উঠবি???

আমি সাকিবের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

সাকিব- তোর কি মাথা ঠিক আছে?? পাঁচ তলার উপরে সবার জন্য অনেক কষ্ট হয়ে যাবে৷ আর লিফটও নেই।

রেনু- আমাদের আগের ফ্ল্যাটটাও নেই সাকিব। প্রথমে কষ্ট হলেও সবাই ঠিক ম্যানেজ করে নিবে। সবারই প্রথম প্রথম সব কিছুতে কষ্ট হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। সবাই নিজেকে মানিয়ে নেয়। আমরাও মানিয়ে নিবো।

সাকিব- তুই সিওর এই বাসাটাই নিবি।

রেনু- এর চাইতে কম পাবো না সাকিব। এমনো পাবো না। ভেবে দেখ অন্য সব বাসার এক মাসের ভাড়া দিয়ে আমি এখানে দুই মাসের ভাড়া দিতে পারবো। আর শুধু ভাড়া দিলেই তো হবে না। পাঁচটা মানুষ তো আর না খেয়ে দিন কাটাবে না। বেঁচে থাকার জন্য মাথার উপর ছাদের পাশাপাশি পেটের জন্য খাবারও প্রয়োজন। সেই সাথে অনু তনুর পড়ালেখাও আছে। বাসার ভাড়ায় যদি সব টাকা চলে যায় তাহলে বাকি সব সামলাবো কিভাবে।

আমার জীবনের বাস্তবতার দিকে তাকিয়ে সাকিব আর কিছুই বলতে পারেনি। আমি সাকিবকে নিয়ে আবার গেলাম।

দু মাসের ভাড়া এ্যাডভান্স করা লাগবে। অনেক রিকুয়েস্ট করলাম এক মাসের ভাড়া এ্যাডভান্স করার জন্য তাও কাজ হলো না দু মাসের ভাড়াই আগে দিতে হবে। আর উঠে চলতি মাসের ভাড়া দেয়া লাগবে। অর্থাৎ একসাথে ২৪ হাজার টাকা দেয়া লাগবে। তাও ভালো অন্য কোথাও হলে তো অনেক টাকা দেয়া লাগতো। রুম দুটো খালিই ছিলো তাই বললাম আমি সেদিনই উঠতে চাই প্রথমে উনারা আপত্তি করলেন। পরে আমি বাবার কথা বলায় উনারা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আর আপত্তি করলেন না। আমি সাথে সাথেই তিন মাসের ভাড়া দিয়ে দিলাম। দুই মাসের এ্যাডভান্স আর চলতি মাসের ভাড়াসহ। আর বললাম আমি সেদিন রাতেই জিনিস-পত্র নিয়ে আসবো কারণ পরের দিনই বাবাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দিবে৷ তখন বাবাকে দেখবো না জিনিস-পত্র আনবো। উনারা আমাকে বাড়ির মেইন গেটের একটা চাবি দিয়ে দিলেন।

আমি সাকিবকে নিয়ে আমাদের ফ্ল্যাটের জন্য বেরিয়ে পরলাম। সাকিবের বাইক ছিলো তাই আর কষ্ট করে হাটা লাগলো না। এমনিতেও সারাদিনে কম হাটিনি। পথে মাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি বাসা নেয়া হয়ে গেছে৷ ফ্ল্যাটে যাচ্ছি সব জিনিস-পত্র আনতে। রাতেই আমি সব গুছিয়ে ফেলবো।

আমাদের ফ্ল্যাটের দরজাটা খুলতেই আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম ঐ যে ড্রইং রুমের বড় চেয়ার টায় আমার বাবা বসে আছে। বাবার আলাদা একটা চেয়ার ছিলো। আমরা তিন বোন বলতাম রাজার চেয়ার আর সেই চেয়ারের রাজাটা ছিলো আমার বাবা। আমি দেখতে পাচ্ছি আমার বাবা পায়ের উপর পা তুলে বসে হাসছেন।

.

চলবে……

Related Posts

Leave a Comment

Direct link ads