পতিতা পর্ব-১০ | Potita -10 লেখিকাঃ ইতি চৌধুরী

অয়ন প্রবল ভাবে নিজেকে রেনুর মায়ায় বাঁধতে চায়। রেনু কি বাধঁবে অয়নকে নিজের মায়ায়। রেনু কি কখনো বুঝবে অয়নের ভেতরটা???

অয়ন চৌধুরী মানুষটা অনেক শক্ত ও কঠিন একজন মানুষ। দাম্ভিক্যতা তাকে দেখলেই বুঝা যায়। ড্রইং রুমে অয়ন চৌধুরীর টাঙ্গানো বিশাল ছবিটা খুটে খুটে দেখছি আর বিশাল কোন ভাবনায় ভেসে রয়েছি। মানুষটার মাঝে কিছু তো আছে। কোন এক অজানা রহস্য বিরাজ করছে মানুষটার মাঝে যা আমি জানি না।

টুনিটাও সকাল থেকে কিছু কাজে ব্যস্ত তাই আমাকে সময় দিতে পারছে না। আরো একদিন থাকা লাগবে এ বাড়িতে তারপর বাড়ি যাবো। আজ তিন দিন আছি এ বাড়িতে। তবে সময়টা খারাপ যাচ্ছে না। টুনির সাথে হেসে কথা বলে ভালোই যাচ্ছে দিন। আর ফোন দিয়ে খবরও নিয়েছি বাসায় সবাইও ভালো আছে। আগের দিন তো টুনি আর রতন ভাইকে নিয়ে নিজের সব চাইতে প্রিয় জায়গায় চা খেতেও গিয়েছিলাম। টুনি তো প্রথমে ভয়ে রাজিই হতে চায় নি। অনেক বলে শেষমেষ রতন ভাইকে সাথে নেয়ায় রাজি হয় টুনি।

রবীন্দ্রসরব আমার সব চাইতে প্রিয় জায়গা চায়ের জন্য। আমি সেই রকমের চা খোর। রবীন্দ্রসরব সব চা খোর দেরই প্রিয় জায়গা৷ চায়ের সাথে আড্ডা প্রেম তো চলেই। তবে গাড়ি থেকে নামিনি যদি কেউ দেখে ফেলে এই ভয়ে৷

সেই থেকে একা একা এটা সেটা দেখে সময় পার করছি। ঘুড়ে ঘুড়েই আবার অয়ন চৌধুরীর বেড রুমে চলে আসলাম। কি করা যায় ভাবতে ভাবতেই এটা সেটা নাড়ানাড়ি করতে করতে মনে পরে গেলো টুনি বলেছিলো বেডের পাশের কেবিনেটে বই রাখা আছে আমার বোর লাগলে যেনো আমি নিয়ে বই পড়ে সময় কাটাই। আমি তাই করল। কেবিনট খুলতেই সেখানে কোন বই পেলাম না তবে বইয়ের বদলে একটা ডায়েরি পেলাম। টুনি যে বলল বই আছে। ডায়েরি টা হাতে নিয়ে এপিঠ ওপিঠ করে দেখলাম কিছুক্ষণ। হালকা ধূষর রংয়ের একটা ডায়েরি। আবার রেখে দিলাম জায়গা মতো। উঠে যেতে নিয়েই খেয়াল করলাম এখানে রাখা ডায়েরি তার মানে ঐ মানুষটার ছাড়া অন্য কারো নয়। অর্থাৎ এই ডায়েরিটা হয়ত বলতে পারবে অয়ন চৌধুরী আসলে কি বা কে???

আমি আবার ডায়েরিটা বের করে নিলাম। ডায়েরিটা নিয়ে বিছানার এক কোণায় গাপটি মেরে বসে পরলাম।

ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টাতেই কিছু সুন্দর কথা লেখা দেখতে পেলাম। এমন মানুষ এই কথাও লিখতে পারে। সেখানে লেখা ছিলো।

“তোমার ভালোবাসায় নিজেকে আবদ্ধ করে দিলাম।”

অয়ন চৌধুরীর মতো মানুষের লেখা ভালোবাসার কথা। আমি পাতা উল্টাতে থাকলাম। প্রতিটা পাতা যেনো নতুন করে বিস্ময়ে ফেলে দিচ্ছে আমাকে। আমি বিস্ময়ের সাথে পাতা উল্টাতেই থাকি। অনেকগুলো পাতা উল্টাতেই এবার থমকে গেলাম। এতোক্ষণ যার ডায়রি জুরে ভালোবাসার কথা লিখা সেই মানুষটার ডায়রির একটা পাতা এমনও হবে তা আশা করিনি। লেখাটা এমন ছিলো।

” এর চাইতে আমাকে মেরো ফেললেও আমি বেঁচে যেতাম। এতো কষ্ট নিয়ে জ্যান্তলাশ হয়ে তো বেঁচে থাকা লাগতো না। কেনো করলে এমন???”

তারপরের পাতা গুলো খালি। মনে হয় অনেক দিন ডায়রিটা ধরেও দেখেনি৷ আমি ডায়রিটা বন্ধ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম ডায়রিটার দিকে। অনেক না বলা কথা আর গল্প জমে আছে এই ডায়রিটাতে। যার জীবনে এতে ভালোবাসা তাহলে সেই মানুষটার শেষ লাইন এমন কেনো??? সেই মানুষটাই বা এমন কেনো??? অনেক না বলা কথা। আমি ভাবতে থাকি তাকে দেয়া রহস্য নামটা স্বার্থ হয়েছে। মানুষটা আসলেই নিজে একটা রহস্য। আমি উঠে ডায়রিটা আবার জায়গা মতো রাখতে গেলেই ডায়রিটা আমার হাত থেকে পরে যায়। ডায়রিটা পরতেই ভেতর থেকে কিছু ছেড়া ছবির টুকরো বেরিয়ে আসে৷ আমি নিচেই বসে পরলাম। টুকরো গুলো তুলে হাতে নিলাম। ভাবলো ভাবে দেখে নিলাম আর কোন টুকরো ডায়রিতে অবশিষ্ট আছে নাকি। ডায়রিটা পাশে রেখেই। টুকরো গুলো মেলাতে শুরু করলাম। কিছু টুকরো মিলাতেই বুঝা যায় দুজন মানুষের ছবি৷ বুঝা যাচ্ছে না কারা তাও রেনু ঠিক আন্দজ করতে পারছে হয়ত অয়ন চৌধুরী ও তার ভালোবাসার মানুষে ছবি এটা। এটা ভাবতেই যেনো ছবিটা দেখার আগ্রহ কয়েক গুণ বেড়ে গেলো আমার। আমি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেনে গুলিয়ে ফেলছিলাম। তখনি টুনি এসে টুকরো গুলো নিয়ে নেয় সাথে ডায়রিটাও।

টুনি- এটা জায়গায় মতোই থাক। আপনাকে আমি বই বের করে দিচ্ছি। এটা থাক।

বলেই টুনি টুকরো গুলো আবার জায়গা মতো রেখে ডায়রিটা ঐ ডয়ারে রেখে দেয়। খাটের অন্য পাশের কেবিনেট থেকে অনেক গুলো বই বের করে দিয়ে বলল।

টুনি- এগুলো স্যারের সব চাইতে প্রিয় বই। কত বার যে পরেছে তার হিসেব নেই। তাই এগুলো এখানে রাখা আর বাকি সব বই লাইব্রেরিতে। স্যারের বই পড়ার অনেক শখ ছিলো তাই ছোট একটা লাইব্রেরিও বানিয়ে ছিলেন। তবে এখন আর যায় না।

আমি আর নিজের জানার ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না তাই জিজ্ঞেস করেই ফেললাম।

রেনু- কেনো যায় না এখন???

টুনি- ভালেবাসার সাথে তার সম্পর্ক নেই আর তাই যায় না।

কথাটা বলেই টুনি বেরিয়ে গেলো। আমি যেনো কোন এক গোলক ধাঁধাঁয় পরে গেলাম। কি এমন হয়েছে মানুষটার সাথে যে ভালোবাসার সাথে তার আর কোন সম্পর্ক নেই। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই দিন পার করে দিলাম। কোন ভাবেই ভিতরের জানতে চাওয়াটাকে দমাতে পারছিলাম না। এই এক সমস্যা আমার কিছু একটা জানতে পারলেই সেটা সম্পূর্ণ না জানা অবদি আমার শান্তি হয় না। আর এখন তো একদমই সহ্য হচ্ছে না। ঐ মানুষটার কষ্টের কথা ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে আমার। বুকের ভিতর হাহাকার করছে শুধু।

রাতে ঠিক মতো খাওয়াও হলো না আমার। ঐ কথা গুলো মাথায় ঘুড়ছে তাই খেতেও পারছি না। যতক্ষণ না সব জানতে পারবো আমার শান্তি হবে না। তাই কোন রকম ডিনার করেই বেডরুমে চলে এলাম। রুমের মাঝে পায়চারি করতে লাগলাম। কোন অজানা সংঙ্কা কাজ করছে আমার ভিতরে।

টুনি- এতো অস্থির না হয়ে দুধ টুকু খেয়ে নিন।

পিছনে ফিরতেই দেখি টুনি এক গ্লাস দুধ নিয়ে রুমে আসে। আমি যে ঠিম মতো খাইনি। কিছু একটা ভেবে অস্থির হচ্ছি তা টুনি ভালো ভাবেই খেয়াল করেছে। দুধের গ্লাসটা রাখতে রাখতেই টুনি আবার বলে উঠল।

টুনি- টুনি তার ভালোবাসার মানুষগুলোর যত্ন করতে জানে। মায়ের পরে তো বাবার মতো এই ভাইটাকেই পেয়েছি আর এখন সাথে আপনি যুক্ত হলেন।

আমি অবাক হয়ে টুনির দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়ে কি সুন্দর অবলীলায় বলে দিলো আমি ওর ভালোবাসার মানুষ। টুনি চলে যেতে নিলেই। আমি ওর হাত ধরে বসলাম।

রেনু- টুনি

টুনি- জানতে চান তো কি হয়েছিলো ঐ মানুষটার সাথে।

রেনু- হুমম

টুনি- দুধটা শেষ করেন আমি আসছি।

আসছি বলে টুনি চলে গেলো। অনেকটা সময় পর দুকাপ চা নিয়ে আসলো৷ আমার সামনে চা দিয়ে টুনি গিয়ে আমলিরার একসাইড খুলে কিছু একটা বের করছে। আমার সামনে এসে আমার হাতে একটা এনভেলপ দিলো। আমি এনভেলপটা খুলতেই ভেতর থেকে একটা ছবি বেরিয়ে এলো। অয়ন চৌধুরীর ছবি তার সাথে হাসিমুখে একজন তাকে দেখছে অপলক।

টুনি- এই ছবিটার একটা ছেড়া টুকরো কপিই তখন আপনি মেলাতে বসে ছিলেন।

আমার বুঝতে বাকি রইল না। এটাই সেই ছবিটা। এই মানুষটাই অয়ন চৌধুরীর ভালোবাসার মানুষ। আমি টুনির দিকে তাকলাম। টুনি আমার জিজ্ঞাসু চাহনি দেখে বলল।

টুনি- অয়ন চৌধুরীর ভালোবাসা সোহা।

.

#চলবে……

Related Posts

Leave a Reply

Direct link ads