পতিতা পর্ব-১৪ | Potita -14 লেখিকাঃ ইতি চৌধুরী

আর বলা তো যায় না কখন কি প্রয়োজন হয়।

আমি কোথাও কোন পথ খোলা পাচ্ছি না। মানুষটাকে এতোবার কল দিলাম কিন্তু পেলাম না৷ কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে পারলাম না তার সাথে।

মা- তুই কি কিছু নিয়ে ভাবছিস???

মার কথার দিকে আমার কোন খেয়ার নেই।

মা- রেনুউ

রেনু- হ্যাঁ মা

মা- কি ভাবছিস এতো??

রেনু- না তো মা।

মা- মনে তো তাই হচ্ছে।

মাকে কিছু বলতে যাবো আর তখনি নার্স এসে ডুকলো।

নার্স- আপনার বাবার সব রিপোর্ট চলে এসেছে শুধু একটা রিপোর্ট বাকি। তাই পরশু আপনার বাবাকে রিলিস দেয়া হবে। আপনি সব বিল গুলো ক্লিয়ার করে দিয়েন।

রেনু- জ্বি।

আরো একদিন বেড়ে গেলো। মানে খরচ টাও বেড়ে গেলো। কোন ভাবেই কোন দিসা পাচ্ছি না।

মা- কিরে তোর মুখ টা এতো শুকনো লাগছে কেনো??

অনু- লাগবেই তো এমনিতেই কিছু খায় না আর গতকাল থেকে তো একদমই কিছু খায় নি।

মা- সে কিরে কেনো??

রেনু- আরে মা কিছু না৷ খেয়ে ছিলাম তো।

মা- চিন্তা করছিস কিভাবে…..

রেনু- মা তুমি এসব নিয়ে ভেবো না তো। বাবার দিকে খেয়াল রাখো।

বলেই মাকে আর কিছু বলতে দিলাম না। কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম। সময়ও কম কিছু একটা করতেই হবে। ফোনটার দিকে সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছি। আমার কাছে অন্য কোন পথ খোলা নেই। তাই সেই নাম্বারটায় কল দিলাম। মাঝে এতো গুলো দিন এই নাম্বারটায় আমার কল দেয়ার প্রয়োজন হয় নি। ২/৩ বার রিং হতেই ঐ পাশে কল রিসিভ হলো।

রেনু- আমার টাকার প্রয়োজন। অনেক টাকা লাগবে।

ঐ পাশে যা বলল শুধু শুনলাম। শুনে ফোন রেখে দিলাম।

কল কাটতেই নিচে অয়ন চৌধুরীর নাম্বার টায় চোখ পরল। চোখটা ঝাপসা হয়ে আসলো। সাথে সাথেই ফোনটা লক করে উঠে গেলাম। নিজেকে শক্ত রাখতে হবে। ভেংগে পরলে হবে না। মায়া, মোহ, ভালোলাগা এসব আমার জন্য নয়।

আগে বাবা যাও একটু কথা বলতে পারত। এখন তাও ঠিক মতো বলতে পারে না। বাবার দিকে তাকালে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করে আমার। আল্লাহ কেনো আমার বাবাটাকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন। এর চাইতে আমাকে দিলেও তো পারতেন।

অয়ন অস্থির হয়ে আছে। না পারছে সইতে আর না পারছে কিছু করতে। কিই বা করবে। আকাশ পথের মাঝে তো চাইলে কলও দিতে পারবে না। মিটিং এ্যাটেন্ট করার সময় ফোন সাইলেন্ট করেছিলো। বের হয়ে যে একবার চেক করবে তাও খেয়াল ছিলো না। কিভাবেই বা খেয়াল থাকবে অয়ন তো পারে না উড়ে দেশে ফিরে যায়। কেনো যেনো বার বার মনে হচ্ছে কেউ অপেক্ষা করছে তার জন্য। এতো দিন তো কেউ ছিলো না অপেক্ষা করার৷ এখনো নেই তবু মনে হয় কাউকে বলে এসেছে হয়ত সে অপেক্ষা করছে তার। তাই মিিটং শেষ করেই সেখান থেকে অয়ন সোজা এয়ারপোর্ট চলে যায়। দেশে ফিরে যাবে বলে। এই মিটিং টাই বাকি ছিলো। তাই এক মিনিটও দেরি করবে না৷ প্লেনে উঠে বসার অনেক্ষণ পর মনে হলো ফোনটা তো একবার চেক করা দরকার। আর টুনিকে একবার কল দিয়ে দেখি কি হয়েছে। এ কয়টা দিন তো কাজের জন্য অয়ন একবারো খবর নিতে পারে নি। না হলে প্রতিদিনই একবার কল দিয়েছে। শুধু এই কয়দিনই দিতে পারে নি। ফোনটা হাতে নিতেই অয়নের চোখ গুলো যেনো বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা। রেনুর নাম্বার থেকে ৩০ টার উপরে মিসডকল। রেনু অয়ন কে কল দিয়ে ছিলো তাও ৩০ বারের বেশি৷ অয়নের যেনো মাথা ঘুড়াতে শুরু করে। যে মেয়ে কথাই বলে না। সে আমায় কল দিয়েছে তাও এতোবার। পরক্ষণে ভয়ে অয়নের বুক কেঁপে উঠে। রেনুর কোন বিপদ হয় নি তো??? অয়নের মনে পরে যায় সেদিনই তো রেনুকে নিয়ে বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছিলো। তাহলে কি ঐ স্বপ্নটা সত্যি ছিলো??? রেনুর কি সত্যি কোন বিপদ হয়েছে। অয়ন কল দিতেই নিবে সাথে সাথে এ্যানাউন্সম্যান্ট হলো সবার ফোন অফ করার জন্য ফ্লাইট টেক অফ করবে। অয়ন আর পারলো না রেনুকে কল দিতে। ভয়ে অয়নের আত্মা পর্যন্ত শুকিয়ে যাচ্ছে৷ সেই থেকে এই পর্যন্ত অয়ন ফ্লাইটে বসে বসে অস্থির হয়ে যাচ্ছে রেনুর জন্য। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে অয়নের। কেনো সে আগে খেয়াল করল না। এতো গুলো ঘন্টা অয়ন শুধু ছটফট করেই কাটাচ্ছে আর অল্প সময় পরেই ফ্লাইট ল্যান্ড করবে কিন্তু অয়নের একদমই তর সইছে না।

সারাদিন মার সাথে বসেই কাটিয়ে দিলাম। প্রায় ৪ টায় বাজে। উঠে পরলাম বের হতে হবে তাই।

মা- তুই কি কোথাও যাবি???

রেনু- ও মা তোমাকে বলা হয় নি। আজকে থেকে অফিসে জয়েন করা লাগবে। অনেকদিন ধরে যাই না৷ সকালে ফোন এসেছিলো আজকে থেকে জয়েন করতে বলল।

মা- আজ থেকেই??

রেনু- কি করবো মা বলো। এই চাকরীটাই তো এখন সব। তোমরা তো আছোই। বেশি কোন প্রয়োজন হলে আমাকে কল দিও।

মা- তাও ঠিক। আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না। এখনি বের হবি অনেক সময় বাকি তো।

রেনু- একটু বাসায় যাবো মা। বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হবো। অফিস থেকে এখানেই চলে আসবো। আর তো মাত্র দুটো দিন তারপর তো বাবাকেই বাসায় নিয়ে যাবো।

ঐ দিকে অয়নও দেশে ফিরে। ফ্লাইট ল্যান্ড করার সাথে সাথেই অয়ন আর অপেক্ষা করে না। ট্যাক্সি নিয়ে বাসায় চলে যায়। ড্রাইভারকে কল দিলে আসতে সময় লাগবে। এর চাইতে নিজেই চলে যাওয়া ভালো হবে।

মাকে বলে বেরিয়ে গেলাম। বাসায় এসে গোসল করে একটু শুয়ে পরলাম। চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে যেনো সব ভেসে আসছে। সুখের দিন গুলো। হুট করে সব এলো মেলো হয়ে যাওয়া। অয়নের আগমন। সব যেনো পরিষ্কার দেখতে পাই।

অয়ন বাড়ির ভেতরে ডুকেই কোন কথা না বলেই টুনিকে ডাকতে থাকে।

অয়ন- টুনি টুনিইইই টুনি

টুনি- আসছিইইইইইই

আসছি বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আসে টুনি। অয়নকে এসময় দেখে টুনি যেনো বিস্ময় খায়। কারণ না বকে হুট হাট অয়ন আসে না। আজ কি মনে করে না বলেই চলে এলো।

টুনি- আপ…

টুনিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অয়ন প্রশ্ন ছুড়ে দেয় টুনির দিকে।

অয়ন- রেনু কোথায়??? কেমন আছে???

টুনি- উনি তো

অয়ন- বল রেনু কোথায়?? গতকাল কি হয়ে ছিলো যে রেনু নিজে আমাকে কল দিলো তাও এতো বার। কি হয়েছে??

আতংকে অয়ন নিজেই একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। টুনিকে বলার কোন সুযোগ দিচ্ছে না। টুনি বুঝতে পারে তাই আর দাড়িয়ে না থেকে কিচেনের দিকে যায়। এটা দেখে অয়ন আরে ক্ষেপে যায়। কথার জবাব না দিয়ে টুনি চলে যাচ্ছে।

অয়ন- আমি প্রশ্ন করছি টুনি তুই জবাব দিচ্ছিস না কেনো??

বলতে বলতে অয়নও টুনির পিছনে পিছনে যায়। টুনি এক গ্লাস পানি অয়নের হাতে দিয়ে বলে।

টুনি- পানি টা খান।

অয়ন- তুই আগে বল। রেনু কেমন আছে। আমাকে কল কেনো দিয়ে ছিলো।

টুনি- বলছি৷ আমি কিছুই জানি না সে তো কিছু দিন ধরেই আসছে না।

অয়নের আর পানিটা মুখে দেয়া হলো না।

অয়ন- আসছে না মানে???

টুনি- জানি না৷ তার কি হয়েছে বা কেনো আসছে না তাও জানি না। রতন ভাই প্রতিদিনই যায় কিন্তু তাকে পায় না। অপেক্ষা করে ফিরে আসে। সুস্থ না অসুস্থ কিছুই জানি না৷

অয়ন- আমাকে কল দেস নি কেনো???

টুনি- দিয়ে ছিলাম পাই নি। আর আপনি এ কয়দিন কল দেন নি তাই জানাতে পারি নি।

অয়ন আর কোন কথা না বলেই সাথে সাথেই বেরিয়ে যায় রেনুর উদ্দেশ্যে।

রাত হয়ে আসছে। আর দেরি করলাম না। তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেলাম। আবার সেই অন্ধকারেই যেতে হবে আমাকে। এই অন্ধকার থেকে বের হওয়ার কোন পথ নেই। এটাই এখন আমার জীবনের বাস্তবতা। ঘর থেকে বেরতে নিয়েই থমকে গেলাম ” তুমি অন্য কারো কাছে যাবে না” কথাটা শুনে পিছনে ফিরে তাকালাম। কিন্তু না কেউ নেই। কথাটা আমার মন বলছে তাই কাউকে দেখতে পেলাম না৷ ঐ মানুষটার সামনে হয়ত আর কখনো গিয়ে দাড়াতে পারবো না। আর ভাবতে পারছি না। বেরিয়ে গেলাম। বের হতেই একটা নাম্বার থেকে ফোন এলো।

রেনু- হ্যালো।

– আমি আপনাকে ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি সেখানে চলে আসেন।

বলেই লোকটা ফোন রেখে দেয় আর সাথে সাথে একটা ম্যাসেজ আসে। ঠিকানাটা একবার দেখে ফোন টা ব্যাগে রাখলাম।

অয়ন কোথায় খুজবে রেনুকে। সেই প্রথম দিন যেখান থেকে রেনুকে নিয়ে এসেছিলো সেই জায়গায় গেলো কিন্তু না রেনু নেই সেখানে। রেনুকে কল দিলেই তো হয়৷ অয়ন নিজেকে মনে মনে পাগল বলতে থাকে। কল দিতেই কয়েকবার রিং হয়ে কেটে যায়।

ফোনটা আবার বেজে উঠল৷ ব্যাগ থেকে বের করতে করতেই থেমে গেলো। কে কল দিয়েছে দেখার জন্য বের করতেই দেখি ফোন টা বন্ধ হয়ে গেছে। একদম চার্জ নেই। মাঝ রাস্তায় কিছু করারও নেই। তাই আবার ব্যাগে রেখে দিলাম। তবে বার বার মনে হচ্ছে কে কল দিয়েছে দেখতেও পারলাম না।

অয়ন আবার কল দেয় কিন্তু ফোন টা বন্ধ।

.

চলবে….

Related Posts

Leave a Reply

Direct link ads