পতিতা পর্ব-১৩ | Potita -13 লেখিকাঃ ইতি চৌধুরী

কিভাবে যে সময় টা কাটাবে অয়ন নিজেই বুঝতে পারছে না। তবে এর আগে কখনো অয়নের এমন মনে হয় নি।

মেয়েটার জন্য এতো টান কেনো অনুভব করে অয়ন৷ এসব প্রশ্নের কোন উত্তর অয়নের কাছে নেই। সব কিছুই কি মায়া আর দয়ার বসে করছে অয়ন নাকি রেনুর প্রতি কোন লোভ বা আকর্ষণ থেকে করছে??? এতো কিছু ভাবতে চায় না অয়ন৷ অনেক গুলো দিন পর অয়ন নিজের মনের মতো দিন যাপন করছে। যেটা ভালো লাগছে সেটাই করছে। হ্যাঁ অয়নের মনটাই বার বার রেনুকে চাইছে। সেটা রেনুর প্রতি মায়া বা আকর্ষণের বসেই হোক না কেনো তবে অয়নের মন চাইছে৷ আর এবার মনটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে অয়ন। তা না হলে তো অন্য একজনের বেঈমানী বার বার অয়নকে আঘাত দিয়ে ভেতরে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে। যে মানুষটা কখনো কাউকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে জানতো আজ সে মানুষটার কাছেই ভালোবাসা মানে যাযাবর।

এ নিয়ে দ্বিতীয় বার স্ট্রোক করে বাবা আর এবার অবস্থা একটু বেশি খারাপ। কথাও বলতে পারছে না। চিকিৎসায় অনেক খরচ হয়ে গেছে। ভাগ্যি হাতে টাকা গুলো ছিলো তাই সমস্যা হয় নি। তবে টাকাও ফুরিয়ে গেছে। বাকি দিন গুলো কিভাবে যাবে। প্রাইভেট হাসপাতালের কেবিন ভাড়া। মেডিসিন খরচ। আই সি ইউর খরচ তার উপর আমরা ৪ জন মানুষ দিন রাত এখানে থাকছি এতে করে বাহিরেই খাওয়া দাওয়া করা লাগছে। সব দিক সামলে হিম-সিম খেয়ে যাচ্ছি।

মা- রেনু

রেনু- হ্যাঁ মা বলো।

মা- একটু বাহিরে আয় আমার সাথে।

রেনু- বলো মা।

মা- এতো খরচ কিভাবে করছিস তুই??? এতো টাকা কোথায় পেলি???

মনে মনে এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম কখন না জানি মায়ের এই প্রশ্নটার সম্মুখিন হতে হয়। আর সেটাই হলো।

মা- কিরে তাকিয়ে আছিস কেন বল। জবাব দে৷ এতো টাকা কোথায় পেলি??? প্রায় হাজার পঞ্চাশের উপরে খরচ করেছিস কিন্তু কিভাবে???

রেনু- অফিস থেকে লোন নিয়েছি মা।

মা- সেদিন জয়েন করলি এর মাঝেই এতো বড় লোন তাও দিয়ে দিলো।

রেনু- দিয়েছে সেটাই তো ভাগ্য মা। না দিলে কি হতো ভেবে দেখেছো?? কিভাবে বাঁচাতাম বাবাকে ভেবেছো একবার???

অনু- আপু তো ঠিকি বলছে মা। যদি অফিস থেকে লোনটা না দিতো তাহলে কি করতাম আমরা??? কোথায় গিয়ে দাড়াতাম?? কে আসতো আমাদের পাশে??

অনুকে পাশে পেয়ে হালকা লাগছে মাকে বুঝাতে সুবিধা হবে। তবু মনের মধ্যে অনেক অপরাধ বোধ কাজ করছে। বার বার একটার পর একটা মিথ্যা বলেই যাচ্ছি মাকে। এ ছাড়া তো আমার কাছে কোন উপায়ও নেই৷ সত্যিটা যে আমি মরে গেলেও বলতে পারবো না। আল্লাহর কাছে মনে মনে বলতে লাগলাম আমার এতো মিথ্যার শাস্তি যেনো আমার বাবা মা বা বোনদের না দেয়৷ আমার মিথ্যাগুলোর সব শাস্তি আমি মাথা পেতে নিবো তাও এই মানুষ গুলোর যেনো কখনো কিছু না হয়।

মাকে কোন মতে বুঝ দিয়ে এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। তবু বিপদ গুলো যেনো আমার পিছু ছাড়ছে না।

অনু- আপু আজকে খাওয়ার জন্য কি করবো???

রেনু- আমি টাকা দিচ্ছি তুই গিয়ে বাইরে থেকে নিয়ে আয়৷

অনু- বলছিলাম কি প্রতিদিন এভাবে বাহিরে খেলে তো অহেতুক বাড়তি খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে। এর চাইতে না হয় আমি বাসায় গিয়ে রান্না করে নিয়ে আসতাম।

রেনু- তুই প্রতিদিন একা যাবি আসবি৷ এর চাইতে থাক এভাবেই চলুক।

অনু- ঠিক আছে তাহলে টাকা দাও।

ব্যাগ থেকে অনুকে ১ হাজার টাকার একটা নোট বের করে দিলাম। আমার কাছে আর মাত্র ১ হাজার টাকা আছে।

অনু- কি হলো কি ভাবছো দাও।

রেনু- হ্যাঁ নে যা।

অনু- কোন সমস্যা???

রেনু- না কিছু না তুই যা। যলদি গিয়ে আয়।

অনুকে পাঠিয়ে দিয়ে আবার ব্যাগ খুলে দেখলাম। আর মাত্র ১ হাজার টাকাই আমার শেষ সম্বল। এর পর কি হবে জানি না। বাবাকে আর কয় দিন হাসপাতালে রাখা লাগে কে জানে। কিভাবে সামলাবো। আগে জানা দরকার তাই গেলাম আঙ্কেলের সাথে কথা বলে আসি।

নক নক

রেনু- আসবো আঙ্কেল????

ডাঃ রহমান- রেনু আসো।

রেনু- আঙ্কেল বলছিলাম কি বাবাকে আর কয় দিন হাসপাতালে রাখা লাগতে পারে।

ডাঃ রহমান- কেনো নিয়ে যেতে চাচ্ছো?

রেনু- না তা নয়৷ প্রয়োজন হলে তো অবশ্যই রাখবো।

ডাঃ রহমান- হুম.. আরো একদিন রাখতে চাচ্ছি আসলে এটা দ্বিতীয় বার তো তাই। কাল দেখি সব ঠিক থাকলে পরশু না হয় নিয়ে যেয়ো।

রেনু- সমস্যা নেই আঙ্কেল যতো সময় লাগে লাগুক আগে বাবার সুস্থতা। বাবার ট্রিটমেন্ট আগে আমার জন্য।

আঙ্কেলের সাথে কথা বলে বেরিয়ে গেলাম। টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। বাবার ট্রিটমেন্টে আমি কোন কমতি রাখতে চাই না। কিন্তু কি করবো মাথায় কিছুই আছে না। কার কাছে চাইবো??? কে দিবে আমাকে এতো টাকা??? এমন কেউ নেই এই মূহুর্তে আমাকে অনেক গুলো টাকা ধার দিবে। আত্মীয় স্বজন যারা আছে তারা আমাদের অবস্থা সম্পর্কে খুব ভালো ভাবেই অবগত তারা হয়ত হাজার দুই এক টাকা এমনি দিয়ে দিবে তবে সেই টাকা দিয়ে তো আর এতো খরচ চলবে না। ধারের কথা বললে হয়ত তারা কেউ দ্বিতীয় বার ফোনটাও ধরবে না। তাই তাদের অহেতুক বিরক্ত করতে চাই না।

কেবিনে গিয়ে ব্যাগটা নিয়ে বেরতে নিলেই মা বাধা দেয়।

মা- কিরে এসময় কোথায় যাচ্ছিস??

রেনু- একটু কাজ আছে মা আসছি। বেশি দেরি করবো না চলে আসবো।

মা- আচ্ছা যলদি চলে আসিস।

আর কথা না বলে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু কোথায় যাবো?? কি করবো??? কিছুই মাথায় আসছে না। বাসায় চলে গেলাম। আলমারিতে খুজতে লাগলাম কোথাও কোন টাকা রাখা আছে নাকি। সব কাপড় চোপড় বের করে ফেললাম নাহ কোথাও একটা টাকাও রাখা নেই। তনুর মাটির ব্যাংকটা তে চোখ গেলো। এটা তনুর অনেক বছরের ব্যাংক। তনু শখ করে কয়েন জমায় এটাতে। শখের বসেই জমায়৷ কখনো প্রয়োজন হবে ভেবে জমায় নি৷ যখন যেটা চেয়েছে তখন তো সেটাই পেয়েছে তাই এমনটা প্রয়োজন কখনই হয় নি। ব্যাংকটা কোলের মাঝে নিয়ে বসে পরলাম। অনেক কান্না পাচ্ছে। তনু জানতোও না যখনই আমার কাছে কয়েন থাকতো আমি প্রায় সময়ই ওর ব্যাংকে কয়েন রেখে দিতাম। আজ আমাকেই সেই ব্যাংকটা ভাংগতে হবে। ভাবতেই পারি নি কখনো এমন দিনও আমার জীবনে আসবে। আল্লাহ এমন দিন দেখানোর আগে মৃত্যুও অনেক ভালো ছিলো। আমি যে তাও কামনা করতে পারি না। চিৎকার করে কাঁদছি। আজ শুনার কেউ নেই। নাহ এই কাজ আমার দ্বারা হবে না। ব্যাংকটা ভাংগলে আমার তনুর মনটাই ভেংগে যাবে। আমার বাচ্চাটাকে আমি এই কষ্ট দিতে পারবো না। ওরাই তো আমার সুখ। পারলাম না ব্যাংকটা ভাংগতে। ব্যাংকটা জায়গা মতো রেখে দিলাম।

কাকে ফোন দিবো। কার কাছে যাবো। মাথা কোন ভাবেই কাজ করছে না।

রেনু- অয়ন…. অয়ন চৌধুরী।

হ্যাঁ ঐ মানুষটাকে ফোন দিলেই তো পারি। ফোন টা বের করলাম। নাম্বার বের করে কল দিতে নিয়ে আবার থেমে গেলাম। তাকে বলাটা কি ঠিক হবে??? সে তো কম করে নি৷ আবার তাকে বলা কি ঠিক হবে??? বলে দেখিই না একবার। পরের টা পরে দেখা যাবে।

– Sir before you enter please put your mobile phone on silent mood.

অয়ন- Oh, yes sure.

অয়ন মিটিং শুরু করার আগে নিজের ফোনটা সাইলেন্ট করে দিলো।

আমি কল দিয়েই যাচ্ছি। এতো বার কল দিলাম। বার বার রিং হয়ে কল কেটে যাচ্ছে বাট রিসিভ হচ্ছে না৷ এতো বার ফোন দিলাম তাও পেলাম না৷

শেষে আর কোন উপায় না পেয়ে হসপিটালের দিকে আগালাম। অনেক্ষণ হয়েছে বেরিয়েছি। মা আবার চিন্তায় পরে যাবে। তাই হাসপাতালে চলে এলাম। আর বল তো যায় না কখন কি প্রয়োজন হয়।

চলবে…….

Related Posts

Leave a Comment

Direct link ads