পতিতা পর্ব-৩ | Potita -3 লেখিকাঃ ইতি চৌধুরী

আমার অন্ধকার জীবন আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে যেতে হবে আবার সেই অন্ধকার গলির অন্ধকার জগৎ এ। আবার নিজেকে অন্ধকারের সাথে মিলিয়ে দিতে। সময় ঘনিয়ে আসছে। আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলাম। আমার মুখে তেমন কোন সাজই নেই। নেই কোন বেশভুসা। আমি বেরিয়ে পরলাম আবার সেই অন্ধকার জীবনের অন্ধকার গলিতে।

আবার অপেক্ষা করছি। বার বার কানে সেই কথাটাই বাজতে লাগল। লোকটা বলেছিলো।

“তুমি অন্য কারো কাছে যাবে না।”

এই কথাটা কেনো বলল??? কেনো বলল এমন কথা??? দাড়িয়ে দাড়িয়ে এটাই ভাবছি৷ সেই ৮টা থেকে দাড়িয়ে এখন ঘড়ির কাটা ৯.৩০ মিনিট৷ গতকাল এক অজানা সর্বনাশের ভয় কাজ করছিলো। তবে আজ জানি না কেনো ঐ কথাটাই মনে পরছে। অন্য কেউ আসবে ভাবতেই নিজেকে আরো বেশি ঘৃণা লাগছে। কিন্তু আমার তো কিছুই করার নেই। কেউ লুটে খাওয়ার চাইতে আমি না হয় নিজেই বিলিয়ে দেই এতে অন্তত নিজেকে শেষ করে নিজের পরিবারটাকে বাঁচাতে পারবো। আমার কষ্ট গুলো না হয় আমাকে মাঝেই সীমাবদ্ধ থাক। কাউকে না হয় নিজের কষ্টের ভাগটা নাই দিলাম।

এক অজানা মানুষের ডাকে হুশফিরলো আমার।

-আপনি কি রেনু???

রেনু- হ্যা,

-আমার কথাই বলেছে আপনাকে চলুন।

রেনু- আমি কিছুক্ষণ লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

লোকটা আমার হাত ধরে আমাকে টেনে সামনের দিকে নিয়ে যেতে থাকল।

এমন সময় হুট করেই আমার সামনে একটা গাড়ি এসে ব্রেক করল। আমি চমকে উঠলাম। লোকটা আমার হাত ছেড়ে দিলো।

পাশে তাকাতেই যেনো আমি বিষম খেলাম। ঐ লোকটা এসেছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক রেগে আছে। রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। সে হন্তদন্ত হয়ে আমার সামনে এসে দাড়াল। লোকটা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরল।

-এই মেয়ে এই তোমাকে না বলেছি তুমি অন্য কারো কাছে যাবে না।

লোকটা রিতিমতো আমাকে ধমকাতে শুরু করল।

-কথা কানে যায় নি। বলছি না অন্য কারো কাছে যাবে না। ড্রাইভারকে ঠিকানা দাও নি কেনো?? বলো কেনো দাও নি??? খুব ইচ্ছে করে অন্য কারো কাছে যেতে??? খুব???

তারা কথা গুলো খারাপ শুনালেও জানি না কোনো আমার ভালো লাগছিলো শুনতে। লোকটা চায় না আমি অন্য কারো কাছে যাই।

– বলো। জবাব দাও। তোমাকে না নিষেধ করেছি। কেনো শুনো নি??

আমি প্রথম তার কথার জবাব দিলাম।

রেনু- আমি তো কারো একার নই।

-চুপপপ…..

আমার জবাবে মনে হয় উনি আরো ক্ষেপে গেলেন।

উনি আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। তখনি বাদ সাধলো আজকের আসা লোকটা।

– আপনি ওকে কথায় নিয়ে যাচ্ছেন৷ ও আজকে আমার সাথে যাবে। আমি টাকা দিয়েছি ওর জন্য।

টাকার কথা শুনে লোকটার রাগ যেনো কয়েক হাজার গুণ বেড়ে গেলো। সে আমার যে হাতটা ধরে ছিলেন আরো জোরে ধরলেন। আমার হাতে খুব বেশি লাগছে তাও আমি কিছু বললাম না।

– ও তাই??? টাকা দিয়েছিস??? কত টাকা??? কত??? ওয়েট….

উনি আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে পিছনে রাখা ব্যাগ থেকে অনেক গুলো টাকা বের করে নিয়ে গিয়ে ঐ লোকটার মুখে ছুড়ে মারলেন আর বললেন।

– নে যা তোর টাকা তোকে দিয়ে দিলাম। এর যদি ওর নাম মুখেও আনিস তাহলে এখানেই শেষ করে দিবো।

বলেই উনি ড্রাইভ করতে লাগলো। রাগে ফুসছেন তাকে দেখলেই বুঝা যায়। রাগের জন্য উনি অনেক বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন।

বাড়ির সামনে এসেই অনেক জোরে জোরে হর্ণ দিতে লাগলো। হর্ণ দিয়েই যাচ্ছেন। থামছেন না।

বাড়ির ভেতরে ডুকতেই লোকটা গাড়ি থেকে নেমে দরজাটা অনেক জোরে লাগিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।

উনি ভেতরে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই টুনি দৌড়ে এলো।

টুনি- আপনি ঠিক আছেন তো??

টুনির প্রশ্নে আমি অনেক অবাক হলাম। তবে কিছু বললাম না। টুনি আমাকে নিয়ে ভিতরে যেতে নিলেই বাড়িতে ডুকতেই লোকটা দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আমাকে প্রায় টানতে টানতে উপরে নিয়ে এলেন তার বেড রুমে।

আমার বিস্ময় যেনো কাটছেই না।

– না করার পরেও কেনো কথা শুনলে না???। কেনো শুনো নি??? What do you think of me??? Do you think i am just a breast??? If you think so then yes thats whats am i.

উনি এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে গেলেন। গতকাল যে মানুষটা আমার সাথে এক অক্ষরও কথা বলে নি আজ সেই মানুষটাই এতো কথা বলছে। কিন্তু কেনো??? জানার কৌতুহল থাকা সত্বেও আমি কোন প্রশ্ন করতে পারছি না। কারণ তাকে এসব প্রশ্ন করা যে আমার সাজে না। তাকে প্রশ্ন করার মতো কোন সম্পর্ক তার সাথে আমার নেই আর কখনো হবেও না। তবু মুখ খুলে শুধু বললাম।

রেনু- রাত বাড়ছে আমি শাওয়ার নিয়ে আসি।

আমার জীবনের বাস্তনতাগুলোই হয়ত আমার মুখের কথাগুলোকে এতোটা পাথরের মতো কঠিন করে দিয়েছে ঠিক যতোটা আমাকে শক্ত করে দিয়েছে।

আমার কথা শুনে তার রাগ যেনো পঞ্চম আকাশে উঠে গেলো। সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ছুড়ে মারলেন।

– খুব শখ তাই না আজ তোমার সব শখ মিটাবো সব….

বলতে বলতেই উনি তার পুরুষত্বের নেশায় মাতলেন। পাগল হয়ে গেলেন। মূহুর্তের মাঝেই মানুষটা যেনো আমার মাঝে হারিয়ে গেলেন।

তার আমার কাছে আসার মাঝে স্পষ্ট ফুটে উঠে কিছু যন্ত্রণা। কিছু আছে যা তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কারো প্রতি অনেক রাগ, ক্ষোভ প্রকাশ পায়। কাউকে এভাবে নিজের করে না পাওয়ার যন্ত্রণা গুলোই মেটাচ্ছেন আমাকে শাস্তি দিয়ে। হয়ত আমার কাছে এসে ঐ মানুষটাকে অনুভব করে যন্ত্রণা দিতে চায়। প্রতিটা মূহুর্তের সাথে তার দেয়া যন্ত্রণা গুলো যেনো বাড়তেই থাকলো৷ একটা সময় আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।

সকাল হতেই আমি উঠে যাই দেরি করে বাসায় ফেরা ঠিক হবে না। এমনি তেই ৮টা বাজে প্রায়। আমি উঠতেই। পাশের মানুষটা বলে উঠলো।

– গুড মর্নিং

তার এভাবে গুড মর্নিং বলায় অবাক হলাম আমি। তবে মনে মনে হাসলাম আমার জন্য আবার গুড মর্নিং।

আমি তার সাথে তেমন একটা কথা বলি না। জানি না কেনো বলার প্রয়োজন মনে হচ্ছে না। তার সাথে তো আমার কথার সম্পর্ক নয় হয়ত তাই একটা জড়তা কাজ করছে। কারণ এই মানুষটাই পৃথিবীতে একজন যে আমার জীবনের কালো অধ্যায়ের সাথে সংয়ুক্ত। তাই পারি না তার সাথে কথা বলতে। তবে একটা সময় আমি অনেক কথা বলতাম তাই তো বাবা শখ করে আমার দিয়ে ছিলো শখের তোতাপাখি। আমি আমার বাবার শখের তোতাপাখি। কারণ আমি কথা বলতে অনেক ভালোবাসি৷ অনেক কথা বলি আমি৷ না ভুল বললাম অনেক কথা বলতাম। এখন আর আগের মতো কথা বলা হয় না। কারণ আমার কথা শুনবে এমন কেউ নেই। সবাই চায় দেহ টাকে কথা শুনতে কেউ চায় না এটাই বাস্তবতা।

-চলো আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসবো।

রেনু- প্রয়োজন নেই। আমি একাই চলে যেতে পারবো।

উনি আমার খানিকটা কাছাকাছি এসে বললেন।

-একদম রাগাবা না বলে দিচ্ছি।

বলেই সে বেরিয়ে গেলো।

খানিক্ষণ পর আমিও নেমে এলাম। আমাকে নামতে দেখেই টুনি আমার কাছে ছুটে এলো।

টুনি- স্যার গাড়িতে আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।

টুনি আমাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। গাড়িতে উঠে বসতেই। সে ড্রাইভি শুরু করল।

আজকেও গলির মোড়ে আসতেই আমি থামাতে বললাম।

-এখানে???

রেনু- হ্যাঁ, বাকিটা আমি নিজেই যেতে পারবো।

-আমি এগিয়ে দেই???

রেনু- নাহ। আমার অন্ধকার জীবনের সীমানা এ পর্যন্তই। এর পর যাওয়ার অনুমতি নেই।

সে আমার কথা শুনে আর কিছুই বললেন না। আমি বেরিয়ে সামনে হাটা শুরু করলাম। বার বার মনে হচ্ছিলো একবার পিছনে ফিরে তাকাই। কিন্তু না ঐ জীবনের কোন মায়া থাকতে নেই। হুট করেই পেছন থেকে সে ডাকলো।

-রেনু….

আমি তার এক ডাকেই পিছনে ফিরে তাকালাম।

-আমি অয়ন। অয়ন চৌধুরী।

প্রথম আমি তার নাম শুনলাম। তবে আমি কিছুই বললাম না। আবার ঘুড়ে বাসায় চলে এলাম।

এতো ক্লাত লাগছে প্রতিটা সিড়ি উপরে উঠতে অনেক বেশি কষ্টে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো যেনো এখানেই থেমে যাই। শরীরটা আর সঙ্গ দিতে পারছিলো না।

আমাকে দেখেই তনু চিৎকার করে উঠল।

তনু- মা আপু এসেছে।

তনু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

তনু- তুমি কি অনেক ক্লান্ত আপু???

রেনু- না রে বাচ্চা।

তনু- না বললেই হলো৷ তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি অনেক ক্লান্ত।

মা- কিরে মা অফিসে কি অনেক বেশি কাজ করায় তোকে দিয়ে???

রেনু- না মা। আসলে নাইট ডিউটি তো তাই একটু বেশি ক্লান্তি ধরে ফেলে আর কিছু না।

মা- আচ্ছা গোসল দিয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।

রেনু- না মা আমি খাবো না একটু ঘুমাবো।

বলেই গোসল করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই নিজেকে হালকা লাগছে। চোখ বন্ধ করতেই কানে শুনতে পেলাম “রেনু, আমি অয়ন। অয়ন চৌধুরী”। কখন যেনো ঘুমিয়ে পরলাম।

.

.

.

#চলবে………

Related Posts

Leave a Comment

Direct link ads