রাস্তায় বেরিয়েই বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো মায়া। হাটতে হাটতে নিজের এলাকা ছেড়ে অনেক দূর চলে এসেছে সে।
রাত ১১ টা বাজে।
অনেকক্ষণ মোহাম্মদপুর করবস্থানের আশেপাশে ঘুর ঘুর করেছে সে। কবরস্থান সংলগ্ন মাঠের আইলেনের উপরে বসে বাবা-মার সাথে মন খুলে কথা বলেছে সে। মায়ার বাবা-মা মারা যাওয়ার পরপর যখন সে এখানে আসতো তখন তার চোখ ভেঙে কান্না আসতো কিন্তু এখন আর কান্না পায় না তার, সব সয়ে গেছে। এই কবরস্থানেই দাফন করা হয়েছিল মায়ার বাবা-মাকে। তাদের কবর এখনো আছে কিনা তা মায়ার জানা নেই। তবু দাফন তো এখানেই করা হয়েছিল তাই তার মন ভালো থাকলেই প্রথমে সে এখানে আসে। মন ভরে বাবা-মার সাথে কথা বলে। তাদের জানায় তাদের মেয়ে ভালো আছে। মায়ার কাছে ভালো থাকা মানে বেঁচে থাকা। সে বেঁচে আছে তার মানে ভালোই আছে সে। ভালো না থাকলে তো আর বেঁচে থাকতো না। তাই মায়ার কাছে ভালো থাকার মানেই বেঁচে থাকা। বাবা-মাকে বলে তারা যেন তার জন্য চিন্তা না করে। সে অনেক ভালো আছে মানুষ রূপী অমানুষদের ভিড়ে আজো নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। বেঁচে থাকার জন্য কারো কাছে তার হাত পাতা লাগে না বরং একদল ভালো মানুষের মুখোশ পরা জানোয়ার তার দরজায় এসে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের দরজার বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখে পৈশাচিক আনন্দ পায় সে।
অনেকটা সময় বাবা-মার সাথে মন খুলে কথা বলে উঠে পরে মায়া।
এই মোহাম্মদপুরেই শৈশব কেটেছে মায়ার, এখানেই তার বড় হওয়া। কিন্তু জীবন আজ তাকে টেনে নিয়ে গেছে এক অন্ধকার বেশ্যা পল্লীতে। হাটতে হাটতে মায়া আসাদ গেটের দিকে চলে আসে। কিছুক্ষণ আসাদ গেটের ওভার ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে থাকে সে। ঠান্ডা বাতাস এসে তাকে বার বার ছুঁয়ে যাচ্ছে। বুকের ভিতরটা পর্যন্ত জুরিয়ে যাচ্ছে মেয়েটার আজ। মন বলছে আজ ভালো কিছু হবে তার সাথে। তবে সে জানে ভালো কিছুই তার মতো মেয়ের জন্য নয়। অনেকদিন পর আজ আবার মন ভরে উন্মুক্ত বাতাসের নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। ওভার ব্রিজের উপর কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে ফার্মগেটের দিকে হাটা ধরে মায়া। হাটতে হাটতে খামারবাড়ি মোড়ের কাছাকাছি এসে হাঁপিয়ে যায় সে।
রাত প্রায় ১ টা বাজতে চলল। পেটের খুদা তাকে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু আশেপাশে কিছুই নেই। দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে গেছে। এমন কি রাস্তার ধারেও কিছু নেই। একটু পানি পাওয়া গেলেও পেটটাকে বুঝ দিতে পারতো মায়া।
রাস্তার উপরেই বসে পরে। এদিক সেদিক তাকাতেই দেখতে পায় পাতলা ছেড়া একটা চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে একটা অল্প বয়সী বাচ্চা। তার পাশেই একটা টুপরি রাখা। মনে হয় তাতে খাওয়ার কিছু আছে। এমন টুপরি বাদাম, চানাচুর, ভর্তা বিক্রেতা ওয়ালারা ব্যবহার করে থাকে সাধারণত সে থেকেই ধারণা করে মায়া।
এগিয়ে গিয়ে বাচ্চাটার মাথার কাছে বসে তাকে ডাকে মায়া।
-কিরে ঘুমায় পরছোছ?
ছেড়া চাদরের ভেতর থেকে একটা দশ/এগারো বছরের ছেলে মুখ বের করে বলে,
-কি হইছে ডাকেন ক্যা?
টুপরি টা দেখিয়ে মায়া জিজ্ঞেস করে,
-তোর টুপরে কি?
-বাদাম, খাইবেন?
-হ দে।
ছেলেটা ঘুম রেখে উঠে বসে তার বাদামের টুপরি খুলতে খুলতে মায়াকে জিজ্ঞেস করে,
-কয় ট্যাকার দিমু?
-দশ ট্যাকার দে। না বিশ ট্যাকার দেয়।
ছেলেটা বাদাম বিক্রি করতে মন দেয়। মায়া আগ বাড়িয়ে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে,
-ঘুমাছ নাই ক্যা এহনো?
-ঘুম আহে না।
-কিল্লেইগা গরম লাগে?
-আমগো কি আর গরম আছে? তিনদিন ধইরা বাদাম ছাড়া কিছুই খাই নাই। ভাতের খিদা কি বাদামে মিডে?
পকেট থেকে কিছু ছেড়া ও পুরান পাঁচ ও দশ টাকার নোট বের করে মায়াকে দেখিয়ে ছেলেটা বলে,
-দেহেন এই কয় ডা ট্যাকা পাইছি সারাদিনে বাদাম বেইচ্চা।
ছেলেটার জন্য বড্ড মায়া অনুভব করে মায়া। ছেলেটা বাদামের প্যাকেটটা মায়ার দিকে এগিয়ে দিলে সে বলে,
-বিশ ট্যাকার খামু না পঞ্চাশ ট্যাকার দে।
মায়া পঞ্চাশ টাকার বাদাম চাইলে ছেলেটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-এতো ট্যাকার বাদাম খাইবেন?
-হ খামু। আমিও আজকে ভাত খাই নাই।
-ক্যা আপনেরও কি ট্যাকা নাই?
-না আছে।
-তাইলে খান নাই ক্যা?
-এমনেই খাই নাই বাইত গিয়া খামু।
ছোট প্যাকেটের বিশ টাকার বাদাম ঢেলে রেখে বড় একটা প্যাকেট নিয়ে তাতে পঞ্চাশ টাকার বাদাম ভরে এগিয়ে দেয় ছেলেটা মায়াকে।
ছেলেটার থেকে বাদাম নিয়ে দাম দেয়ার জন্য বুকের ভাজ থেকে একশ টাকার একটা নোট বের করে কিছুক্ষণ ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার কি ভেবে যেন একশ টাকার নোটটা রেখে দিয়ে একটা পাঁচশ টাকার নোট এগিয়ে দেয় মায়া। পাঁচশ টাকার চকচকে নতুন নোট দেখে ছেলেটা বলে,
-এত ট্যাকা ভাংতি নাইকা আমার কাছে।
-ভাঙতি লাগবো না পুরাডাই রাইখা দে।
-ক্য! এত ট্যাকা রাখুম ক্যা?
-আমি দিছি হেল্লেইগ্গা রাখবি।
-না এত ট্যাকা আমি রাখুম না। আপনে আমারে পঞ্চাশ ট্যাকাই দেন।
-পঞ্চাশ ট্যাকা নাইকা আমার কাছে তুই পুরা ট্যাকা রাইখা ভাত খাবি।
-আপনে আমারে ভাত খাইতে দিতাছেন?
-হ, এই ট্যাকা দিয়া ভাত খাবি তুই।
ভাত খেতে পারবে শুনে ছেলেটার চোখ-মুখ ঝলঝল করে ওঠে। মায়ার মনে আছে ছোট বেলায় তার বাবা যখন প্রতিদিন অফিস থেকে আসার সময় তার জন্য কখনো চকলেট, কখনো কেক, কখনো আইসক্রিম নিয়ে আসতো তা দেখে তার চোখ-মুখ ঝলঝল করতো। সেই ছোটবেলার মায়া কখনো ভেবেই দেখেনি ভাত খাওয়ার কথা শুনেও কারো চোখ-মুখ এমন ঝলঝল করতে পারে, কেউ খুশি হতে পারে এক বেলা ভাত খেতে পারবে জেনে।
মায়া ছেলেটার হাতে টাকাটা গুজে দেয়। খুশি হয়েও পর মুহূর্তে মুখ মলিন করে নিয়ে ছেলেটা বলে,
-এই ট্যাকা দিয়া না হয় তিন চাইরদিন খাইলাম হের পর তো হেই না খাইয়াই থাকোন লাগবো।
ছেলেটার জন্য বড্ড বেশি মায়া টান পরে মায়ার মনে। সে বলে,
-না, না খাইয়া থাকোন লাগবো না। তর যহন খিদা লাগবো তুই ইংলিশ রোড যাবি গা। হনে গিয়া কবি মায়া বুর কাছে যামু। তাইলেই কেউ না কেউ তোরে আমার ঠিকানা দেহায় দিবো। আমার কাছে গিয়া ভাত খাইয়া আবি।
-আপনকে আমারে ভাত খাওয়াইবেন!
-হ খাওয়ামু। তর যহন খিদা লাগবো আমার কাছে যাবিগা আমি তোরে ভাত খাওয়ামু।
-সত্যি!
-হ সত্যি কইলাম তো।
-আইচ্ছা আমি যামু আপনের কাছে ভাত খাইতে।
-আইচ্ছা এহন ঘুমা আমি জাইগা।
-আপনে এরপর হেনে আইলে আমারে না পাইলে যে কাউরে জিগাইলেই হইবো মীম কই। তাইলেই ব্যাবাকে কইয়া দিবো আমি কই আছি।
-আইচ্ছা এহন ঘুমা।
মায়া যাওয়ার জন্য উঠে পরলে ছেলেটা পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলে,
-আমি কইলাম সত্যি সত্যি আপনের কাছে ভাত খাইতে যামু।
-আইচ্ছা যাইস। আমি আশায় থাকুম।
ফিক করে হেসে দেয় মায়া। দুনিয়াটা বড়ই বিচিত্র জায়গায়। এক বেলা ভাত খেতে পারার নিশ্চয়তা পাওয়া কারো কাছে লটারি জিতার চাইতেও বেশি আনন্দের। মাত্রই এমন আনন্দ মায়া মীম নামের ছেলেটার চোখে দেখে এসেছে।
আপন মনে বাদাম খাচ্ছে আর ফার্মগেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মায়া। তার গন্তব্য হাতিরঝিল। হাতিরঝিলে কিছুটা সময় কাটিয়ে আবার সেই অন্ধকার দুনিয়ার দিকে পা বাড়াবে সে।
বাদাম খাচ্ছে আর হাঁটছে মায়া। একটু পানি খাওয়া খুব দরকার তার কিন্তু কোনো একটা দোকানপাট খোলা নেই। তাই হেটেই চলেছে মায়া হয়তো সামনে কোনো দোকান খোলা পেলেও পেতে পারে।
মায়া টের পাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে একটা গাড়ি তাকে ফলো করছে। করাটাই স্বাভাবিক এতো রাত করে তো কোনো ভালো ঘরের মেয়ে রাস্তায় হাটবে না আর এই সময়টাতেই মানুষ রূপী জানোয়ার গুলো তাদের মুখোশের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। আরো কিছুটা পথ এগিয়ে যাওয়ার পর পেছনের গাড়িটা একবার হর্ন বাজায়। মায়া বুঝতে পারে গাড়িতে যে আছে সে তাকেই ডাকছে। এই পর্যন্ত আসতে পথে অনেকেই মায়াকে তার দাম জিজ্ঞেস করেছে। সবাইকেই মুখে উপর না করে দিয়েছে সে। যারা বাড়াবাড়ি করেছে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিও দিয়েছে।
গাড়িটা এনিয়ে তৃতীয় বারের মতো হর্ন দেয়। এবার মাথা বিগড়ে যায় মায়ার। মায়া পাল্টা পেছন ঘুরে এসে ড্রাইভিং সিটের জানালায় টোকা দিতেই গাড়ির ভেতরে বসে থাকা মানুষটা জানালার কাচ নামিয়ে দেয়। কিন্তু গাড়ির ভেতর অন্ধকার, রাস্তায়ও আলো কম বলে ঠিক দেখা যাচ্ছে না গাড়িতে কে আছে। কে আছে তা নিয়ে মায়ার কোনো মাথা ব্যথা নেই। কথা বলার জন্য তার মুখ দেখার প্রয়োজন হয় না বিশেষ করে গালি দেয়ার জন্য।
-কি মিয়া সমস্যা কি? কহন থন দেখতাছি পিছন পিছন আইতাছেন, ক্যান কী চাই?
গাড়ির ভেতরে থাকা মানুষটা চুপ করে থাকে। এটা মায়ার আরেক সমস্যা কাউকে প্রশ্ন করলে আর সে উত্তর না দিলে তার মাথা আরো বিগড়ে যায়।
-কথা কন না ক্যা? মুখে জবান নাই নাকি? আর পিছে আইবেন না কইলাম নাইলে চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার কইরা দিমু। করনের শখ মিডায় দিমু এক্কেবারে কইলাম।
মায়া চলে যেতে নিলে গাড়ির ভেতর থেকে মানুষটা আবার হর্ন দেয়। আরো মাথা বিগড়ে যায় মায়ার। তার মন টা আজ ভালো বলে এখনো গালাগাল দেয়া শুরু করেনি সে। গাড়ির দরজার কাছে ফিরে আসে মায়া আবার।
-সমস্যা কি হর্ন দেন ক্যা?
-যাবা আমার সাথে?
-না আজকা কারো লগেই যামু না।
-যা চাও তাই পাবা।
-কিছু চাই না। আজকা মায়া কোনো বেডার লগেই হুইবো না। আজকা মায়া নিজের লগে ব্যবসা করবো৷ আপনে নিজের রাস্তা মাপেন আজকা আমারে পাইবেন না। আমারে লাগলে কাইলকা আইয়েন। ইংলশি রোড গেলেই আমারে পাইবেন।
-যত টাকা চাও পাবা।
-আরে মিয়া কইলাম তো আজকা আমি কিছু করুম না।
-কিছু করা লাগবে না শুধু আমার পাশে বসে থাকলেই হবে।
লোকটার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় মায়া। তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
-যদিও আমার চেহারাডা অনেক সুন্দর, রূপ বেশি আমার তাও কেউ এই মায়ার চেহারা দেহনের লেইগা তার কাছে আহে না। সবার চাই মায়ার গতর। কাইলকা আইয়েন পাইয়া যাইবেন। আজকা আর জ্বালায়েন না।
-বললাম তো আমি কিছু করবো না।
-দূর মিয়া মজা না কইরা যান তো হেন্থে।
হুট করেই লোকটা গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। গাড়ি থেকে বের হওয়া লোকটার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে মায়া।
মায়া তার এতটা বয়সে এই পর্যন্ত অনেক পুরুষের সাথে শুয়েছে কিন্তু এমন রূপবতী পুরুষ সে তার জীবনে দ্বিতীয়টি দেখেনি। এমন পুরুষদের কথা তো গল্প উপন্যাসেই পাওয়া যায়। বাস্তবেও যে এমন পুরুষ আছে তা মায়ার জানা ছিল না। উচ্চতায় কম করে হলেও লোকটা পাঁচ ফিট এগারো বা পুরোপুরি ছয় ফিটও হতে পারে। গায়ের রং যাকে বলে দুধে আলতা। তার পরনে কালো রঙের কমপ্লিট সুট। মাথা ভর্তি চুল কপাল জুড়ে এলো মেলো হয়ে আছে। তার নাকের কাছে বিন্দু বিন্দু ঘাম৷ মায়ার আচমকাই ইচ্ছে করছে টুক করে ঠোঁট দিয়ে ঐ ঘাম ছুঁয়ে দিতে। লোকটার শরীর থেকে সুন্দর একরকম সুরভী ভেসে আসছে মায়ার নাক পর্যন্ত। হয়তো কোনো দামী পারফিউমের ঘ্রাণ তবে মায়ার মনে হচ্ছে এই ঘ্রাণটা সে লোকটার গায়েও পাবে যদি খুব কাছ থেকে শুকে দেখতে পারে তো।
লোকটার তুড়ি বাজানোর শব্দে ভাবনাচ্ছেদ হয় মায়ার। লোকটা বলে,
-কিছু করবো না আমি।
-হুনেন কেউ মায়ার মুখের দিক চাইয়া থাকতে হেরে নেয় না। আজকা সত্যি সত্যি আমি কিছু করুম না। কাইলকা আইয়েন যা কইবেন, যেমনে কইবেন করুম তয় আজকা না।
-আহ!
একপ্রকার গর্জন করে ওঠে লোকটা আর বলে,
-বললাম না কিছু করবো না কথা কানে যায় না। যত টাকা চাও পাবা।
-কিছু না করলে আমারে নিয়া কি করবেন?
-শুধু আমার পাশে বসে থাকবে।
-আমি ক্যান আপনের লগে বাইয়া থাকমু?
-আমি বলছি তাই।
-না যামু না আমি। আপনে যানগা।
-এরপর না করলে তুলে নিয়ে যাবো বলে দিলাম। ভালোয় ভালোয় গাড়িতে উঠে বসো বলছি। এর পরেও না করলে ব্যাপারটা খারাপ হয়ে যাবে।
কারো ধার ধারার মতো মেয়ে মায়া নয়। অন্য সময় বা অন্য কেউ হলে হয়তো ঠাস করে মুখের উপর একটা দিয়ে দিতো মায়া। কিন্তু এই মুহূর্তে লোকটাকে বড্ড বেশি অদ্ভুত লাগছে মায়ার কাছে। মায়া জিজ্ঞেস করে,
-সত্যিই কিছু করবেন না?
-কথা দিচ্ছি কিছু করবো না।
এর আগে এভাবে কখনো কেউ কথা বলেনি মায়ার সাথে, কোনো কথা দেয়া তো দূরের কথা। মায়ার সাথে কথা বলার সময়টাই বা কোথায় কারো কাছে। যেই মায়ার কাছে এসেছে এসেই ঝাপিয়ে পরেছে তার শরীরের উপর। তাকে খুবলে খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরেছে সবাই।
-মনে থাকে যেন কিছু করলে….
মায়াকে কথা শেষ করতে না দিয়েই লোকটা বলে,
-কিছুই করবো না।
মায়া গটগট করে হেটে গাড়ির অন্যপাশের দরজার কাছে গেলে লোকটা বলে,
-দাঁড়াও।
মায়া গাড়ির দরজা খোলার জন্য দরজায় হাত দিতে নিয়েও থেমে যায়। লোকটা এগিয়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে মায়াকে বলে,
-উঠো।
লোকটার কর্মকান্ড যতই দেখছে ততই অবাক লাগছে মায়ার কাছে। মায়া গাড়িতে উঠে বসতেই লোকটা হুট করে এগিয়ে আসে একদম মায়ার মুখোমুখি। চমকে ওঠে মায়া! লোকটা মায়ার সিট বেল্ট আটকে দিয়ে গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিয়ে সে নিজেও গাড়িতে উঠে স্টিয়ারিংয়ে হাত দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করতে করতে জিজ্ঞেস করে,
-নাম কি তোমার?
মায়া নিজের নাম বলতে নিলে লোকটা তাকে বাঁধা দিয়ে আরো বলে,
-কোনো পাতানো নাম নয় আসল নাম কি?
-মুনমুন।
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মায়া লোকটার দিকে। কিন্তু তার দৃষ্টি রাস্তার দিকে। সে খুব মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চাচ্ছে।
.
চলবে…..