মায়াকথন পর্ব-১ | Mayakathon -1 লেখিকাঃ ইতি চৌধুরী

খুব সুন্দর ও পরিপাটি হয়ে সাজগোজ করেছে মায়া। আজ তার মনটা ভালো। মন ভালো মানে আজ সে আর কোন খদ্দের কাছে যাবে না। আজ আর সে কোন মানুষ রূপী জানোয়ারের সাথে ব্যবসা করবে না, আজ মায়া ব্যবসা করবে নিজের সাথে। হালকা রঙের একটা সুতি কাপড় পরেছে সে। খুব যত্ন করে চোখে কাজল দিয়ে কোমড় পর্যন্ত লম্বা ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। মায়াকে এভাবে সাজতে দেখতেই রেগে আগুন হয়ে যায় তার মহাজন জমিলা।
ঘড়িতে রাত ৮ টা বাজে। এটা ব্যবসার আসল সময়। এই সময় ভালো পার্টি আসে। এই পাড়ায় মায়ার অনেক দাম, ডিমান্ড বেশি। যেই আসে আগে মায়াকে চায়। পেয়ে গেলে কপাল না হলে অন্য কাউকে দিয়ে কাজ চালাতে হয়। কেউ কেউ তো ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে তবু তার মায়াকেই লাগবে। যারা একবার মায়ার বুকে রাত কাটায় তারা আর মায়াকে ছাড়া মজা পায় না।

কারো সাথে কোন কথা না বলে বেরিয়ে যেতে নেয় মায়া। রাগে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে জমিলা বলে,
-কিরে মাগী সকাল থেইকা একটা খদ্দেরও ঘরে হান্দাইতে দেস নাই ক্যা?
দাঁড়িয়ে গিয়ে মায়া বলে,
-গতকাল তোমারে কইছি না আজকে আমি কারো লগে হুমু না তুমি পাডাইছো ক্যা হেগো? তোমারে না করছি না আমি, কথা কানে যায় নাই তোমার?
-তোর সাহস তো কম না তুই আমার লগে গলা উচা কইরা কথা কস।
-তোমারে কইছি না যেদিন আমার মন ভালো থাকবো হেদিন আমি কারো লগেই হুমু না। হাজার কেন লাখ ট্যাকা দিলেও হুমু না।
-না হুইলে ট্যাকা পাবি কই মাগী? শইলের তেজ দেহাস আমারে?
-হ দেহাই। আমার শইলে তেজ আছে আমি দেহাই। তোমার তো তাও নাইকা। আমাগো শইল বেইচা বাইচ্চা আছো তুমি।
মায়ার দেয়া এমন খোঁচায় যেন রক্ত মাথা উঠে যায় জামিলার। হুংকার দিয়ে জমিলা বলে,
-তর লেইগা কতগুলান খদ্দের নাখোশ হইয়া গেলো গা মাগীর ঘরের মাগী।
-এ্যা, যেন খদ্দের হের। ঐসব খদ্দের আবার কাইলকা বেলা থাকতেই আইয়া আমার দরজায় খাড়ায় থাকবো।
মায়া জমিলার কাছাকাছি এসে কিছুটা তার দিকে ঝুঁকে বলে,
-এই মায়ার শইলের অনেক সাদ বুঝলা যে একবার খাইছে তার বারবার খাইতে হয়। মায়ার শইল ডা হইলো বড় নেশা। এর পর বাইরে যাওনের টাইমে আর রাস্তা আটকাইবা না কইয়া দিলাম তোমারে।
-আজকের ট্যাকা কে দিবো রে তোর মরা…
বাকি কথা জমিলাকে শেষ করতে না দিয়ে বুকের ভাজ থেকে টাকা বের করে জমিলার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে মায়া বলে,
-কাইলকা তো আর এমনে এমনেই বেশি খদ্দের খাওয়াই নাই। আমি তো জানি বেডি তুমি ট্যাকা ছাড়া কিছু চিনো না।
টাকাটা তুলে নিয়ে নিজের বুকের ভাঁজে রাখতে রাখতে জমিলা বলে,
-বাইচা থাকনের লেইগা ট্যাকা ডাই সব লো মাগী। বুঝবি বুঝবি যেদিন এই শইল, রূপ, যৌবন থাকবো না তহন বুঝবি ট্যাকা কি জিনিস।
-তোমার ট্যাকা লইয়া তুমি হুইয়া থাকো আমি গেলাম।
-আবি কহন?
-জানি না।
-আবার ভাইগ্গা যাইস না কইলাম কিন্তু।
-ভাইগ্গা আর যামু কই। সকালে আইয়া পারুম।
বলতে বলতেই বেরিয়ে যায় মায়া।
মায়া বেরিয়ে যেতেই পাশ থেকে তাবাসসুম সামনে এগিয়ে এসে জমিলাকে জিজ্ঞেস করে,
-আপনে তো আমগোরে এমনে যহন তহন এলাকার বাইরে বাইরাইতে দেন না তাইলে ওরে আটকান না কেন?
-আলো মাগীরে ওরে ছাইড়া দিলেও ওয় যাইবো না আমি জানি।
-যদি যায় গা?
-গেলে যাইবো গা।
-কি কন? আপনের মাথা ঠিক আছে নি?
-হ রে ঠিকই আছে। তগোরে তো মাইনষে আমার কাছে বেইচ্চা গেছে কিন্তু ওরে কে বেচ্ছে জানোছো?
-কে?
-ওয় নিজে।
-কি কন!
-হো, ঠিক কই। কত মানুষ দেখলাম কত মাইয়া বেচলো আমার কাছে কিন্তু এই মায়াই প্রথম যে নিজেরে নিজে বেচ্ছে। এমন ঘটনা আমি আমার জীবনেও দেহি নাই। কেউ নিজেই নিজেরে বেইচ্চা দেয়।
-কেন!
-গল্প।
-গল্প!
-হ, মাইনষের জীবনে কত গল্প থাকে। ওর ও আছে। ও যদি যাইতেও গা চায় আমি ওরে আটকামু না। জানোস তাবাসসুম মায়া যেদিন প্রথম আইলো আমার কাছে কি সুন্দর মাইয়া ডা দেখতে। আমি বেডি মানুষ হইয়াও হা কইরা চাইয়া আছিলাম ওর মুখের দিগে।
-কি কন এহনই তো কত সুন্দর ওয়। ওর রূপ তো বাইয়া পরে হের লাইগাই তো বেডারা ওরেই চায়।
-আরে এই রূপ কিছুই না। তহন এক্কেরে সূর্যের লাহান গরম আছিল দেখতে। দেখলেই খাইয়া হালাইতে মন চায় এতো সুন্দর আছিলো। একবার তো এক মন্ত্রী আইছিল, তহন মায়া নতুন এই লাইনে। কচি জিনিস খাইয়া বেডা আর যাইতে চায় না৷ ওরে কিনতেও চাইছিল আমি দেই না। ওরে আমি কইছিলাম ওয় কোনদিন এই নরকের থোন যাইতে গা চাইলে আমি ওরে মুক্ত কইরা দিমু।
-কি কন আপনে এডি?
আর কিছু বলতে চায় না সে তাই তাবাসসুমকে ঝাড়ি দিয়ে জমিলা বলে,
-ঐ ছেমরি তোর খদ্দের নাই? যা কামে যা মাগী গল্প গিলতাছে বইয়া বইয়া।
মায়ার অতীত ঘাটতে ঘাটতে জমিলার মতো কর্কশ মহিলার মনও বিষন্নতায় ছেয়ে যায়।
.
চলবে….

Related Posts

Leave a Reply

Direct link ads